বর্ণনা:
(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির এক বিকেলে নীলা আর রাতুলের প্রথম দেখা হয় এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে। এক শান্ত মেয়ে, যার চোখে লুকিয়ে আছে এক গভীর দুনিয়া, আর এক চঞ্চল যুবক, যে বাস্তববাদী কিন্তু অনুভূতিপ্রবণ। বন্ধুত্বের শুরু থেকে ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্কের জটিলতা বাড়তে থাকে—কখনো বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়, কখনো হাতিরঝিলের নীরব পথে। ভালোবাসা কি শুধুই অনুভূতির ব্যাপার, নাকি এর সাথে জড়িয়ে থাকে দায়িত্বের বোধ? নীলা ও রাতুলের হৃদয়ের টানাপোড়েন, স্বীকারোক্তি, দ্বিধা আর নতুন পথের সন্ধানে এগিয়ে চলে এক আবেগঘন গল্প।) হৃদয়ের জানালা (পার্ট ১) টি আগে পড়ে আসতে পারেন।
নতুন পথের খোঁজে
নীলা ও রাতুলের ভালোবাসার স্বীকারোক্তির পর তাদের সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। কিন্তু সেই সম্পর্ক সহজ ছিল না। নীলার দ্বিধা, রাতুলের ধৈর্য, আর জীবনের বাস্তবতা তাদের প্রেমের পথকে কখনো রঙিন করেছে, কখনো কঠিন।
নীলা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে চলে যায়। রাতুল ঢাকা থেকেই তার স্বপ্ন গড়তে থাকে। দূরত্ব কি তাদের প্রেমকে টিকিয়ে রাখতে পারবে?
প্রথম কয়েক মাস তারা প্রতিদিন কথা বলত। ভিডিও কল, বার্তা—সবই চলত আগের মতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়ে গেল, কথা কমে গেল, অনুভূতিগুলো যেন ফিকে হতে থাকল।
একদিন রাতুল বার্তায় লিখল—
“নীলা, তুমি কি জানো? দূরত্ব আমাদের মাঝে শূন্যতা তৈরি করছে, নাকি আমাদের আরো কাছাকাছি আনছে?”
নীলা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে উত্তর দিল—
“রাতুল, ভালোবাসা শুধু কথা বলা নয়, এটা অনুভবের ব্যাপারও। যদি সত্যিই আমাদের মধ্যে ভালোবাসা থাকে, তাহলে সময় আর দূরত্ব কোনো বাধা হবে না।”
কিন্তু সময় কি সত্যিই তাদের ভালোবাসাকে অটুট রাখতে পারবে?
ফিরে আসার গল্প
দুই বছর পর।
নীলা দেশে ফিরে এসেছে। কিন্তু সবকিছু কি আগের মতো আছে? সে রাতুলকে ফোন করেনি, রাতুলও চুপ ছিল।
এক সন্ধ্যায়, হাতিরঝিলের সেই পরিচিত জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল নীলা। আচমকা পিছন থেকে একটা কণ্ঠ শুনল—
“তুমি তাহলে ফিরে এসেছ?”
নীলা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল। রাতুল। চোখের দৃষ্টিতে হাজারো প্রশ্ন, হাজারো অভিমান।
“আমি জানি না, তুমি এখন কেমন আছো, কিন্তু…”
নীলা কথা শেষ করতে পারল না। রাতুল মৃদু হাসল, “আমি ঠিকই আছি। শুধু ভাবছিলাম, আমাদের গল্পটা কি এখানেই শেষ, নাকি নতুনভাবে শুরু হতে পারে?”
নীলার চোখে জল চলে এল। সে আস্তে করে বলল, “গল্প শেষ তখনই হয়, যখন আমরা সেটাকে শেষ বলে মানি। আমি চাই, আমাদের গল্পটা চলুক…”
রাতুল হাত বাড়িয়ে দিল। নীলা তার হাত ধরল।
ভাঙনের সুর
সপ্তাহ কয়েক কেটে যায়। রাতুল নীলার সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করলেও, তার জীবনে অন্য এক আকর্ষণ এসে পড়ে। রূপা—এক সহকর্মী, যার উপস্থিতি রাতুলের মনে নতুন এক অনুভূতি এনে দেয়। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর ধীরে ধীরে গভীর হয়ে ওঠা সম্পর্ক।
নীলা টের পায় রাতুল বদলে যাচ্ছে। একদিন সে সরাসরি রাতুলকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার জীবনে কেউ এসেছে, তাই না?”
রাতুল কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। নীলা বুঝে যায়, কিছু না বলাই অনেক কিছু বলার সমান।
নীলা সিদ্ধান্ত নেয় দূরে সরে যাওয়ার। সে রাতুলকে বিদায় জানায় এবং নিজের ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগ দেয়।
উপলব্ধি
রাতুল নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে গেলেও, তার মনের কোথাও যেন খচখচ করছিল। রূপার সঙ্গে সময় কাটালেও, সে বুঝতে পারে, তার মন যেন অন্য কোথাও পড়ে আছে। নীলার সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর কথা বারবার মনে পড়ে।
একদিন হঠাৎ করেই রূপা বলে, “রাতুল, তুমি এখনো নীলাকে ভুলতে পারোনি, তাই না?”
রাতুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্বীকার করে নেয়, “হয়তো পারিনি…”
রূপা হাসে, “তাহলে দেরি করো না। সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়া সহজ নয়, আর তুমি যদি তা হারিয়ে ফেলো, সারাজীবন আফসোস করবে।”
রাতুল রূপার কথা শুনে বুঝতে পারে, সে আসলেই ভুল করেছে। সে তড়িঘড়ি করে নীলাকে খুঁজতে যায়।
নতুন শুরু
নীলা তখন বিদেশের একটি চাকরির প্রস্তাব পেয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যস্ত। ঠিক সেই সময় রাতুল তাকে দেখতে যায়।
“তুমি চলে যাচ্ছো?”
নীলা হতভম্ব হয়ে যায়, “তুমি হঠাৎ এখানে কেন?”
রাতুল মৃদু হাসে, “তুমি কি জানো, আমি কত কিছু উপলব্ধি করেছি?”
নীলা তাকে অবাক দৃষ্টিতে দেখে, “তুমি কি চাও?”
রাতুল গভীরভাবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি চাই, তুমি আরেকবার আমাকে বিশ্বাস করো। আরেকবার আমাদের গল্পটা শুরু হোক, তবে এইবার ভুলগুলো শুধরে নিয়ে।”
নীলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, “আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি, রাতুল। তুমি কি সত্যি নিজেকে বদলাতে পারবে?”
রাতুল হাত বাড়িয়ে দেয়, “চেষ্টা করতে চাই, যদি তুমি পাশে থাকো।”
নীলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তারপর হাত বাড়িয়ে দেয়। “আমাদের গল্পটা তাহলে আবার শুরু হোক…”
বৃষ্টি নেমে আসে, বাতাসে ভাসতে থাকে তাদের নতুন পথচলার অঙ্গীকার।
এইভাবে, রাতুল ও নীলার সম্পর্ক এক নতুন মোড় নেয়। তারা বুঝতে পারে, সত্যিকারের ভালোবাসা হারিয়ে গেলেও, তা ফিরে পাওয়া অসম্ভব নয়—শুধু প্রয়োজন সঠিক উপলব্ধি আর একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা।