A-romantic-novel-cover-illustration-depicting-a-young-man-and-woman-sitting-on-a-bench-at-Dhaka-Universitys-TSC-during-sunset.-The-girl-holds-an-old.

হৃদয়ের জানালা – একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প

প্রথম দেখা

A young woman sitting alone on a bench at TSC, Dhaka University, during sunset. She holds an old book in her hands but is lost in thought, gazing intoরাতুল আর নীলার প্রথম দেখা হয়েছিল এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে। এক বিকেলের শেষ ভাগে, যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল, তখন নীলা একা বসে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির বেঞ্চে। হাতে একটা পুরোনো বই, কিন্তু চোখ বইয়ের পাতায় নয়, যেন হারিয়ে গেছে অন্য কোনো দুনিয়ায়।

রাতুল ওখানেই বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ করেই তার চোখ পড়ল মেয়েটার দিকে। নীলার দৃষ্টি, চুলের এলোমেলো ভাব, আর শান্ত একটা মায়াবী চেহারা রাতুলের মনোযোগ কেড়ে নিল।

একটা হালকা বাতাস এসে নীলার বইয়ের পাতা উল্টে দিল। সে বিরক্ত হয়ে বইটা ঠিক করতে যাচ্ছিল, তখনই রাতুল এগিয়ে গিয়ে বলল, “আমি কি সাহায্য করতে পারি?”

নীলা একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল।

বন্ধুত্বের শুরু

সেই ছোট্ট ঘটনাই যেন তাদের প্রথম আলাপের কারণ হয়ে দাঁড়াল। এরপর থেকে মাঝে মাঝেই তাদের দেখা হতে লাগল। নীলার বইয়ের প্রতি ভালোবাসা আর রাতুলের চঞ্চল স্বভাব ধীরে ধীরে এক বন্ধুত্বের বাঁধনে জড়িয়ে ফেলল দুজনকে।

নীলা খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে, ভাবতে ভালোবাসে, স্বপ্ন দেখে। আর রাতুল বাস্তববাদী, জীবনের প্রতি তার একটা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে।

একদিন বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে নীলা আর রাতুল বৃষ্টিভেজা টিএসসির চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। নীলা হেসে বলল, “তুমি জানো, কখনো কখনো কিছু মানুষ আমাদের জীবনে আসে, যারা অল্প সময়েই আমাদের জীবনের অংশ হয়ে যায়?”

রাতুল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “তাহলে কি আমি তোমার জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছি?”

নীলা হেসে কিছু বলল না, শুধু চোখ তুলে তাকাল রাতুলের দিকে।

অনুভূতির জটিলতা

সময় গড়াতে লাগল, আর তাদের বন্ধুত্বও আরও গভীর হতে থাকল। কিন্তু অনুভূতির এই গভীরতা কখন যেন এক অজানা টান তৈরি করল রাতুলের মনে। সে বুঝতে পারছিল না, এই বন্ধুত্ব কি শুধুই বন্ধুত্ব, নাকি এর চেয়েও কিছু বেশি?

এক সন্ধ্যায়, তারা হাতিরঝিলে হাঁটছিল। হঠাৎ নীলা বলল, “রাতুল, তুমি কি কখনো এমন অনুভব করেছ যে তুমি কাউকে হারাতে চাও না, কিন্তু তাকে ধরে রাখারও সাহস নেই?”

রাতুল থমকে গেল। নীলার চোখে একধরনের অদ্ভুত বিষণ্ণতা দেখতে পেল সে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “হয়তো করেছি… হয়তো এখনই করছি।”

নীলা কিছু বলল না, শুধু হাঁটতে থাকল। কিন্তু রাতুল জানত, আজকের এই কথাগুলো তাদের সম্পর্কের গতিপথ বদলে দেবে।

স্বীকারোক্তি

A-romantic-novel-cover-illustration-featuring-a-young-man-and-woman-sitting-by-the-lake-at-night-in-Dhaka-Bangladesh.-The-man-is-gazing-at-the-womanদিন গড়াতে লাগল, আর রাতুলের মনে এক অস্থিরতা বাড়তে থাকল। সে অনুভব করছিল, নীলাকে হারানোর ভয় তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। সে কি সত্যিই নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছে? নাকি এই অনুভূতিটা কেবল বন্ধুত্বের গভীরতা?

এক সন্ধ্যায়, নীলা আর রাতুল বসেছিল ধানমন্ডি লেকে। চারপাশে বাতিগুলো জলছিল, পানির ওপর তাদের আলো প্রতিফলিত হচ্ছিল। হঠাৎ নীলা বলল, “তুমি কেমন যেন বদলে গেছ, রাতুল।”

রাতুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “নীলা, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। অনেকদিন ধরে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছি।”

নীলা চুপ করে তার দিকে তাকাল। রাতুল এক মুহূর্ত চোখ বন্ধ করে নিয়ে বলল, “আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

নীলার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। বাতাস যেন থমকে গেল এক মুহূর্তের জন্য।

নীলার উত্তর

A young woman and a young man sitting together on a bench at night near a calm lake, reflecting city lights. The woman looks down, deep in thought, whনীলা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। রাতুলের চোখে এক অজানা আকুলতা। সে যেন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে, অথচ ভিতরটা অস্থির হয়ে আছে।

“রাতুল,” ধীর কণ্ঠে বলল নীলা, “তুমি কি জানো, ভালোবাসা কেবল অনুভূতির ব্যাপার নয়, এটা দায়িত্বও?”

রাতুল চমকে তাকাল। “তুমি কী বলতে চাও?”

নীলা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “আমি ভয় পাই, রাতুল। সম্পর্ক মানেই শুধু সুন্দর মুহূর্তগুলো নয়, কষ্টও থাকে। আমি জানি না, আমি সেই কষ্টগুলো নিতে পারব কি না।”

রাতুল কিছুক্ষণ নীরবে তাকিয়ে রইল নীলার দিকে। তারপর বলল, “আমি জানি, ভালোবাসা সহজ নয়। কিন্তু আমি জানি, তোমাকে ছাড়া সবকিছু আরও কঠিন হয়ে যাবে।”

নীলা চোখ নামিয়ে ফেলল, তার হাতের আঙুলগুলো অসহায়ের মতো মোচড়াতে লাগল। “আমাকে একটু সময় দাও, রাতুল। আমি বুঝতে চাই, আমার হৃদয় আসলে কী চায়।”

রাতুল মৃদু হাসল, “আমি অপেক্ষা করব, নীলা। যতদিন লাগে, ততদিন।”

নতুন পথের সন্ধান

দিন কাটতে থাকল, নীলা আর রাতুলের দেখা আগের মতোই হচ্ছিল, কিন্তু এক অদৃশ্য দূরত্ব যেন তাদের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে।

একদিন, নীলা একা বসে ছিল সেই পুরোনো বেঞ্চে, যেখানে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। হঠাৎ রাতুল এসে পাশে বসে বলল, “ভেবেছ?”

নীলা মাথা ঝুঁকিয়ে বলল, “হ্যাঁ, অনেক ভেবেছি। আমি বুঝতে পেরেছি, আমি তোমার প্রতি টান অনুভব করি, কিন্তু আমি এখনো নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত মনে করছি না।”

রাতুল হাসল, “তাহলে? আমাদের গল্প এখানেই শেষ?”

নীলা একটু হেসে বলল, “শেষ নয়, রাতুল। আমরা যদি সত্যিই একে অপরের জন্য তৈরি হই, তবে সময় আমাদের আবার একসঙ্গে নিয়ে আসবে।”

রাতুল কিছু বলল না, শুধু আকাশের দিকে তাকাল। একটা নতুন শুরু অপেক্ষা করছিল, হয়তো একসঙ্গে, হয়তো আলাদা। কিন্তু তারা জানত, এই বন্ধনটা চিরদিনের জন্য থেকে যাবে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *