A dark and eerie train at midnight, stopped mysteriously in the middle of nowhere. The train is old and covered in fog, with a dim light glowing from

শেষট্রেন

রাত প্রায় বারোটা। শহরের শেষ ট্রেনটা ছুটে চলেছে অন্ধকারের ভিতর দিয়ে। পুরো কামরায় মাত্র চার-পাঁচজন যাত্রী। সবার চোখে ক্লান্তি, সারাদিনের ধকল শেষে বাড়ি ফেরার তাড়া।

আশফাক জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে। অফিস থেকে ফিরছে, কিন্তু মনটা কেমন অস্থির লাগছে। আজ সারাদিন মনে হচ্ছিল কেউ ওর পেছনে পেছনে ঘুরছে, কিন্তু ফিরে তাকালেই কিছু দেখতে পায়নি। এসব কাকতালীয় ঘটনা, নাকি সত্যি কিছু ঘটতে চলেছে?

হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেন থেমে গেল। আশফাক চারপাশে তাকিয়ে দেখল, ট্রেনের অন্য যাত্রীরাও অবাক হয়ে গেছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল, কোনো স্টেশন নেই। গভীর অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

ড্রাইভার বা কোনো স্টাফের খোঁজ নেই। কয়েক মিনিট পর ট্রেনের ভেতর একটা ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করল। আশফাক অনুভব করল, কারও উপস্থিতি আছে, অথচ কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

“তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?” পাশের সিট থেকে একটা ক্ষীণ কণ্ঠ ভেসে এলো।

আশফাক চমকে তাকাল। সেখানে একজন বৃদ্ধ বসে ছিলেন, কিন্তু তার চোখে ছিল শূন্য দৃষ্টি। আশফাক কিছু বলার আগেই বৃদ্ধ ফিসফিস করে বললেন, “এই ট্রেনটা কখনো গন্তব্যে পৌঁছাবে না। কারণ, আমরা সবাই… এখানে আটকে গেছি!”

ঠিক তখনই ট্রেনের লাইটগুলো একসঙ্গে নিভে গেল। চারপাশ অন্ধকারে ডুবে গেল, আর আশফাকের গা শিউরে উঠল।

A mysterious old man sitting on a train seat at night, his eyes blank and empty. He wears a tattered coat, and his face looks ghostly pale under the d

সেখানে একজন বৃদ্ধ বসে ছিলেন, কিন্তু তার চোখে ছিল শূন্য দৃষ্টি। আশফাক কিছু বলার আগেই বৃদ্ধ ফিসফিস করে বললেন, “এই ট্রেনটা কখনো গন্তব্যে পৌঁছাবে না। কারণ, আমরা সবাই… এখানে আটকে গেছি!”

ঠিক তখনই ট্রেনের লাইটগুলো একসঙ্গে নিভে গেল। চারপাশ অন্ধকারে ডুবে গেল, আর আশফাকের গা শিউরে উঠল।চারপাশে নিকষ অন্ধকার। আশফাকের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বৃদ্ধের কথা মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে— “এই ট্রেনটা কখনো গন্তব্যে পৌঁছাবে না!”

হঠাৎ ট্রেনটা আবার ধাক্কা খেলো। বাইরে তাকিয়ে দেখে, চারপাশে একটা অদ্ভুত কুয়াশা, আর তার মধ্যে অস্পষ্ট কিছু ছায়া নড়াচড়া করছে। যেন কেউ হাঁটছে, কিন্তু ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না।

“কে ওখানে?” আশফাক চিৎকার করল।

কেউ উত্তর দিল না, কিন্তু ট্রেনের কামরায় একটা শীতল অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল। কিছু একটা ওদের দিকে এগিয়ে আসছে!

বৃদ্ধ তখনো ফিসফিস করে বলছেন, “এখান থেকে বেরোতে হবে… দ্রুত!”

“কিন্তু কিভাবে?” আশফাক তাকিয়ে দেখল দরজাগুলো বন্ধ, আর ট্রেনও থেমে আছে মাঝপথে।

“একটাই উপায়,” বৃদ্ধ আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালেন, তার কণ্ঠ যেন দূর থেকে ভেসে আসছে। “যদি তুমি সাহস দেখাতে পারো…”

আশফাক কিছু বুঝে ওঠার আগেই বৃদ্ধ ট্রেনের দরজার কাছে গেলেন, আর মুহূর্তেই তার শরীর কুয়াশার মতো মিলিয়ে গেল!

এবার আশফাক বুঝতে পারল—এই বৃদ্ধ মানুষ নয়, বরং ট্রেনেরই কোনো এক অতৃপ্ত আত্মা!

কিন্তু এর মধ্যে আশফাকের পেছনে একটা শ্বাসের শব্দ শোনা গেল। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখল—তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই ছায়ামূর্তিগুলো…

তারা কি?
এই ট্রেন কি সত্যিই ফিরে যাবে না?
নাকি আশফাকেরও এখানে আটকে পড়ার পালা?

আশফাক ধীরে ধীরে পেছনে ঘুরল। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়ামূর্তিগুলো যেন ধোঁয়ার তৈরি—তবে তাদের চোখ ছিল! গভীর অন্ধকারের মধ্যেও সেই চোখদুটো কেমন একটা ঠান্ডা, নিস্প্রভ আলো ছড়াচ্ছিল।

হঠাৎ করেই ট্রেনের লাইটগুলো ঝলসে উঠল, তারপর আবার নিভে গেল। সেই এক সেকেন্ডের আলোতেই আশফাক যা দেখল, তাতে তার শরীর হিম হয়ে গেল। ছায়ামূর্তিগুলো কেবল ছায়া নয়, তাদের মুখগুলো বিকৃত! ভয়ানকভাবে কুঁচকে যাওয়া, চোখের কোটরে কেবল কালো গর্ত!

“তুমি… তুমি কি চাও?” আশফাক কাঁপা গলায় বলল।

একটা বিকট, কানে বেজে ওঠা গর্জনের মতো আওয়াজ এল, যেন ট্রেনের চারপাশের বাতাসই কাঁপছে।

“তুমি চলে যেতে পারবে না…”

আশফাক পিছিয়ে যেতে লাগল, কিন্তু ট্রেনের দরজাগুলো এখনো বন্ধ! বৃদ্ধ লোকটা তো বলেছিল বেরোনোর পথ আছে, কিন্তু কোথায়?

হঠাৎ করেই ট্রেনটা আবার চলতে শুরু করল! এবার আগের চেয়েও দ্রুতগতিতে! আশফাক শক্ত করে পাশের সিট ধরে রইল। ট্রেনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল—বাইরে এখন আর কোনো রেললাইন নেই! শুধুই ঘন অন্ধকার আর ধোঁয়ার মতো ছায়া, যা বয়ে যাচ্ছে বিদ্যুতের গতিতে!

“আমি কি স্বপ্ন দেখছি?” নিজের হাত চিমটি কাটতে গিয়ে দেখল, সত্যি ব্যথা লাগছে! এটা স্বপ্ন না!

তখনই মনে পড়ল—বৃদ্ধ বলেছিল, “যদি তুমি সাহস দেখাতে পারো…”

সাহস? কিসের সাহস?

A dark and eerie train interior at night. The dimly lit driver's cabin door is slightly open, revealing an empty space where no one was supposed to beহঠাৎ তার চোখ পড়ল ট্রেনের সামনের দিকে—ড্রাইভারের কেবিনের দরজাটা অল্প ফাঁকা! কিন্তু এতক্ষণ ওখানে কেউ ছিল না! আশফাক ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগোল। চারপাশে ছায়াগুলো এবার ধীরে ধীরে ঘন হয়ে আসছে, যেন তাকে থামানোর চেষ্টা করছে!

বুক কাঁপলেও থামতে পারবে না। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল সে।

আর ঢুকেই জমে গেল!

সিটে বসে থাকা ট্রেনচালক কোনো মানুষ নয়! তার মাথা শরীর থেকে আলাদা হয়ে ঝুলছে! মাথাটা ধীরে ধীরে ঘুরে আশফাকের দিকে তাকাল, আর কুয়াশার মতো গলায় ফিসফিস করে বলল—

“তুমি এখানেই থাকবে… চিরদিন!”

আশফাকের গা শিউরে উঠল! ট্রেনচালকের কাটা মাথাটা ধীরে ধীরে হাসছে, আর সেই হাসিটা একটা অদ্ভুত গা-ছমছমে শব্দ তুলছে—যেন বাতাস ফুঁপিয়ে কাঁদছে!

“আমি এখানেই থাকব? না! এটা হতে পারে না!”

আশফাক পাগলের মতো দরজার দিকে দৌড় দিল। কিন্তু তখনই ট্রেনটা আবার প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেল! যেন পুরো ট্রেনটাই আকাশ থেকে পড়ে যাচ্ছে! আশফাক দরজার ফাঁকে দাঁড়িয়ে গেল—বাইরে এখনো শুধুই অন্ধকার, কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই, কোনো পথ নেই!

“বের হতে চাইলে লাফাও!”

বৃদ্ধের কণ্ঠস্বর যেন বাতাসের মধ্যে ভেসে এলো!

“কিন্তু যদি আমি পড়ে যাই? যদি…”

কোনো সময় নেই। ছায়াগুলো এবার পুরো কামরায় ছড়িয়ে পড়ছে, তাদের বিকৃত মুখগুলো যেন চিৎকার করছে। আশফাক জানে, যদি আর এক সেকেন্ড দেরি করে, তাহলে সে আর কখনো ফিরতে পারবে না!

এক গভীর শ্বাস নিয়ে সে চোখ বন্ধ করল।

আর তারপর, নিজেকে পুরোপুরি ছেড়ে দিল অন্ধকারের দিকে…


হঠাৎ সে চমকে উঠে বসল!

চারপাশে চেনা পরিবেশ। ট্রেনের কামরায় সাধারণ কিছু যাত্রী বসে আছে, জানালা দিয়ে শহরের আলো দেখা যাচ্ছে।

“কি হয়েছিল?”

A mysterious old man standing at the dark corner of a train station, barely visible in the dim light. His face is slightly illuminated, revealing a fa

সে নিজের হাত দেখল—স্বাভাবিক! বুক ধকধক করছে, কিন্তু সে ঠিক আছে! ট্রেন স্বাভাবিকভাবে চলতে শুরু করেছে।

কিন্তু একটা ব্যাপার অদ্ভুত।

বিরক্ত হয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করল সে। ঘড়ির দিকে তাকাতেই মাথাটা ঝাঁকি খেল।

রাত ১১:৪৫।

এটাই সেই সময়, যখন ট্রেনটা হঠাৎ থেমে গিয়েছিল!

তাহলে কি সবকিছু… স্বপ্ন ছিল? নাকি সত্যি?

কিন্তু আসল ধাক্কাটা এলো যখন সে জানালার বাইরে তাকাল।

স্টেশনের এক কোণায়, যেখানে আলো প্রায় পৌঁছায় না, একটা পরিচিত মুখ দাঁড়িয়ে।

বৃদ্ধ লোকটা! সে ঠোঁটে হালকা হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আশফাকের দিকে।

আর পরের মুহূর্তেই, ধোঁয়ার মতো মিলিয়ে গেল অন্ধকারে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *