A beautiful Indian woman in a traditional yet elegant saree, standing by a window at night, gazing outside with longing and anticipation. She has a gr

বিদেশ-বিভুঁইয়ে স্বামীর অপেক্ষায়

রুমা বউদি একা থাকেন এই শহরে। ওর বর, অরূপদা, কাজের জন্য আমেরিকায় থাকে। বছর তিনেক হয়ে গেল, মাঝে মাঝে আসে, আবার চলে যায়।

প্রথম প্রথম সব ঠিকই ছিল। ফোনে কথা হতো, ভিডিও কলে হাসিমুখে সময় কাটতো। কিন্তু দিন যত গড়াল, রুমার একাকীত্বও বাড়তে লাগল। একা থাকা, নিজের যত্ন নেওয়া, সংসারের সব দায়িত্ব সামলানো—সবকিছু যেন ওর একার হয়ে গেল।

একদিন, সন্ধেবেলা ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল রুমা বউদি। হঠাৎ পাশের ফ্ল্যাটের সৌমেনদা এসে বলল,
— “কী রুমা, একা একা ছাদে? কী ভাবছো?”
রুমা ম্লান হাসল, “ভাবছি, কবে যে ও ফিরবে!”

সৌমেন একটু চুপ করে থেকে বলল, “সবাই তো ফিরতে পারে না… কিন্তু তুমিও তো রক্ত-মাংসের মানুষ!”

 

রুমা কিছু বলল না। শুধু আকাশের দিকে চেয়ে থাকল। আজকাল সে সত্যিই বোঝে না, প্রতীক্ষা কখন ভালোবাসা থাকে, আর কখন অভ্যাস হয়ে যায়!

A beautiful Indian woman in a traditional saree, sitting near a window at night, looking at her phone with a mix of hope and sadness. The moonlight soরুমা বউদি চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। সৌমেনের কথাগুলো মাথায় বাজছিল। সত্যিই, সে কি শুধু অভ্যাসবশত অপেক্ষা করছে? নাকি ভালোবাসাটা আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে যাচ্ছে?

সৌমেন একটু এগিয়ে এসে বলল, “রুমা, জানো? মানুষ একা থাকতে থাকতে একসময় ক্লান্ত হয়ে যায়।”

রুমা এক দম গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, “আমি ক্লান্ত নই, সৌমেনদা, শুধু…শুধু মনে হয়, আমি বোধহয় ভুলে গেছি কীভাবে হাসতে হয়।”

সৌমেন একটু হাসল, “তাহলে চলো, কাল বিকেলে এক কাপ কফি খাই। ভালো লাগবে।”

রুমা কিছু বলল না, শুধু চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। একাকীত্ব কি সত্যিই কফির কাপের সঙ্গে ভাগ করা যায়?

রুমা বউদি চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। সৌমেনের কথাগুলো মাথায় বাজছিল। সত্যিই, সে কি শুধু অভ্যাসবশত অপেক্ষা করছে? নাকি ভালোবাসাটা আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে যাচ্ছে?

সৌমেন একটু এগিয়ে এসে বলল, “রুমা, জানো? মানুষ একা থাকতে থাকতে একসময় ক্লান্ত হয়ে যায়।”

রুমা এক দম গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, “আমি ক্লান্ত নই, সৌমেনদা, শুধু…শুধু মনে হয়, আমি বোধহয় ভুলে গেছি কীভাবে হাসতে হয়।”

সৌমেন একটু হাসল, “তাহলে চলো, কাল বিকেলে এক কাপ কফি খাই। ভালো লাগবে।”

রুমা কিছু বলল না, শুধু চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। একাকীত্ব কি সত্যিই কফির কাপের সঙ্গে ভাগ করা যায়?

রুমা বউদি সারা রাত ঠিকমতো ঘুমোতে পারল না। সৌমেনের কথাগুলো কানের মধ্যে গুনগুন করছিল। “চলো, কাল বিকেলে এক কাপ কফি খাই। ভালো লাগবে।”

পরের দিন বিকেলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখল সে। অনেক দিন পর নিজেকে একটু সুন্দর করে সাজালো। হয়তো নিজের জন্য, নাহলে হয়তো কারও জন্য… কে জানে!

সন্ধ্যার ঠিক আগে, ক্যাফের ছোট্ট এক কোণে বসেছিল তারা। সৌমেন হালকা হেসে বলল, “রুমা, তুমি হাসলে অনেক সুন্দর দেখায়, জানো?”

রুমা একটু হেসে বলল, “অনেক দিন পর মনে হচ্ছে, সত্যি করে হাসছি।”

কিন্তু ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠল— স্ক্রিনে অরূপদার নাম ভেসে উঠল!

রুমার বুকের ভেতর ধক করে উঠল।

রুমার আঙুল কাঁপছিল, কিন্তু সে ফোনটা ধরল।

“হ্যালো?”

ওপাশ থেকে অরূপদার ক্লান্ত কণ্ঠ, “কী করছিলে?”

রুমা এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, “কিছু না, বাইরে বেরিয়েছিলাম।”

“বাইরে? এত রাতে?”

সৌমেন তখন ওর মুখের অভিব্যক্তি লক্ষ্য করছিল। রুমা এক গ্লাস পানি নিয়ে চুমুক দিল, তারপর বলল, “হ্যাঁ, একটু কফি খাচ্ছি।”

ওপাশে কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর অরূপ বলল, “ভালো করেছো। আমি আসলে ভাবছিলাম… এবার একটু বেশি দিন থাকব দেশে। তোমারও তো সময় দেওয়া দরকার।”

রুমার বুকের মধ্যে কেমন একটা অনুভূতি হল— এটা কি খুশি? না কি দোটানার কাঁটা?

সৌমেন ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “সব ঠিক তো?”

রুমা ফোনটা কেটে রাখল। এক গ্লাস পানি শেষ করে বলল, “সব ঠিক আছে… হয়তো একটু দেরিতে বুঝলাম।”

 

কিন্তু সত্যিই কি সব ঠিক ছিল? নাকি কিছু একটা বদলে যাচ্ছিল?

রুমা বউদি চুপচাপ বসে রইল। হাতের কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে, কিন্তু মনের মধ্যে যেন ঝড় বইছে। অরূপদা ফিরছে… এতদিন পর। ও কি সত্যিই ওকে আগের মতো ভালোবাসে? নাকি অভ্যাসের জালে জড়িয়ে গেছে সম্পর্কটা?

সৌমেন একবার চোখ তুলে তাকাল, “কী ভাবছো?”

রুমা ম্লান হেসে বলল, “অনেক কিছু… নিজেকেও বুঝতে পারছি না আজকাল।”

সৌমেন একটু হেসে বলল, “সব উত্তর খোঁজার দরকার নেই, রুমা। কিছু প্রশ্নের উত্তর সময় আপনাকে নিজে থেকেই দিয়ে দেয়।”

রুমা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কফির বিল মিটিয়ে উঠে দাঁড়াল, “চল যাই, অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সৌমেন বলল, “একটা কথা বলব?”

“বলো।”

“তুমি কি সত্যিই অপেক্ষা করছো? নাকি শুধু নিজেকে বোঝাচ্ছো যে অপেক্ষা করা উচিত?”

 

রুমার বুকের মধ্যে ধাক্কা লাগল। ওর মুখে কোনো কথা এল না। শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। আজ শহরের আকাশে চাঁদটা একটু বেশি ঝকঝক করছে…

A beautiful Indian woman in a traditional saree, talking to a charming stranger in a dimly lit, romantic setting. She looks captivated, her expressiveরুমা বউদি চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। সৌমেনের কথাগুলো যেন ওর মনের গোপন অনুভূতিগুলোকে খুলে দেখিয়ে দিল। সত্যিই, সে কি অপেক্ষা করছে? নাকি শুধু নিজের দায়িত্ববোধ থেকে সম্পর্কটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে?

সৌমেন আবার বলল, “রুমা, আমি তোমাকে কখনো কোনো ভুল পথে টানতে চাই না। কিন্তু একটা সত্যি কথা বলি? তুমি যদি একদিন বুঝতে পারো যে এই অপেক্ষার আর কোনো মানে নেই, তাহলে নিজেকে দোষ দিও না… নিজেকে বন্দী কোরো না।”

রুমার গলা শুকিয়ে গেল। এত সহজে কি সব ছেড়ে দেওয়া যায়? অরূপদার সঙ্গে এত বছরের সম্পর্ক, এত স্মৃতি…

বাড়ি ফিরে সে আয়নার সামনে দাঁড়াল। নিজের ক্লান্ত, বিষণ্ণ মুখটা দেখল। এই মুখটাই কি ছিল একসময়, যে অরূপদার ভালোবাসায় উজ্জ্বল হয়ে উঠত?

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অরূপ আবার ফোন করল।

“রুমা, আমি ঠিক করেছি, এবার এলে কয়েকমাস থাকব। নতুন করে সব শুরু করব আমরা, কেমন?”

রুমা কিছু বলল না, শুধু একমুখ হাসি দিয়ে বলল, “হুম… আসো। দেখা হবে।”

কিন্তু মনে মনে ও ভাবল— নতুন করে শুরু? নাকি পুরনো গল্পের আবারও একই পরিণতি?

অরূপদা ফিরে এসেছে।

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে তাকিয়ে দেখল, রুমা এসেছিল ওকে নিতে। কিন্তু ওর চোখে সেই উচ্ছ্বাস নেই, যা একসময় থাকত। একসময় অরূপ আসার দিন মানেই রুমার চোখে অশ্রুর চিকচিক, বুকভরা উচ্ছ্বাস… কিন্তু আজ? আজ শুধু একটা দায়বোধের হাসি।

গাড়িতে বসে অরূপ বলল, “কেমন আছো?”

রুমা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল, “ভালো।”

কিন্তু এই “ভালো” শব্দের মধ্যে একরাশ শূন্যতা লুকিয়ে ছিল।

বাসায় ফেরার পর অরূপ ব্যাগ খুলে গিফট বের করল। দামি পারফিউম, শাড়ি, গয়না… রুমার হাতে দিয়ে বলল, “তোমার জন্য এনেছি।”

রুমা একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল, “ধন্যবাদ।”

অরূপ ওর হাত ধরতে চাইল, কিন্তু রুমা খুব সহজেই সরে গেল। অরূপ বুঝতে পারছিল, কিছু একটা বদলে গেছে।

কিন্তু কী?

রাতে রুমা ছাদে গিয়েছিল। সৌমেনের নম্বরটা স্ক্রিনে ভেসে ছিল, কিন্তু সে কল করল না। শুধু চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল।

ও কি সত্যিই আবার নতুন করে শুরু করতে পারবে? নাকি ওর মন অন্য কোথাও পথ খুঁজে নিয়েছে?

A melancholic yet intimate scene on a rooftop at night. A beautiful Indian woman in a saree stands under the open sky, gazing into the distance with aরুমা বউদি ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল, হাওয়ায় চুল উড়ছিল। হাতের ফোনটা এখনো স্ক্রিন-লক অবস্থায় সৌমেনের নামটা দেখাচ্ছিল, কিন্তু সে কল করল না।

পেছন থেকে অরূপ এসে দাঁড়াল। “কী করছো এখানে?”

রুমা ধীর গলায় বলল, “এভাবেই তো কাটিয়ে দিয়েছি এতগুলো বছর, একলা… এই ছাদ, এই আকাশ, এই অপেক্ষা।”

অরূপ একটু কাছে এগিয়ে এসে বলল, “আমি তো এখন আছি, রুমা। চেষ্টা করব সব ঠিক করতে।”

রুমা গভীর শ্বাস নিল। “তুমি কি জানো, সম্পর্কের ভিত একবার ফাঁকা হয়ে গেলে সেটা জোড়া লাগানো যায় না? তুমি দূরে থাকলে আমার জীবন থেমে থাকেনি, আমি শিখেছি একা থাকতে, শিখেছি নিজের জন্য ভাবতে। আর এখন…”

অরূপ ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “এখন কী?”

রুমা ধীরে ধীরে বলল, “এখন আমি বুঝতে শিখেছি, আমি শুধু তোমার অপেক্ষায় থাকতে জন্মাইনি। আমি চাই না আর অপেক্ষা করতে।”

অরূপ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল। এই প্রথমবার ও বুঝল, সম্পর্ক শুধু দূরত্বের কারণে ভাঙে না, অপেক্ষার সীমা যখন শেষ হয়ে যায়, তখনো ভাঙে।

সেই রাতে রুমা ফোনটা হাতে নিল। একটু দ্বিধা, একটু শঙ্কা… তারপর সাহস করে সৌমেনকে কল করল।

ওপাশ থেকে চেনা কণ্ঠ ভেসে এল, “হ্যালো, রুমা?”

রুমার ঠোঁটের কোণে একফোঁটা হাসি এল… অনেকদিন পর সত্যিকারের হাসি।

(সমাপ্ত) 😏🔥

 

গল্পটা এখানেই শেষ। কিন্তু জীবন কি কখনো সত্যি শেষ হয়?

রুমা কি সৌমেনের সঙ্গে নতুন করে জীবন শুরু করবে? নাকি একা থাকাই বেছে নেবে? অরূপ কি ওকে ফিরে পেতে লড়বে, নাকি মেনে নেবে বাস্তবতা?

 

এগুলো হয়তো আরেকটা গল্পের অংশ… অথবা, হয়তো উত্তর খুঁজতে হবে পাঠকের মনেই। 😏🔥

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *