আজকাল মানুষের ব্যবহৃত দ্রব্যে এবং খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে যে হারে কেমিক্যাল এবং রঙের ব্যবহার বাড়ছে তাতে করে নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া আর উপায় নেই। বিশেষত মহিলাদের পক্ষে ঘরের কাজ সামলে নিজেদের সঠিক ওজনের দিকে নজর দিতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এখানে দেওয়া মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট প্ল্যান ফলো করে মহিলারা নিজেদের ওজন কমানোর লক্ষ্যে অবিচল থাকতে পারবেন।
Table of Contents
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
মেয়েদের ওজন কমানোর পদ্ধতিটি মোটামুটি দুটি ভাগে সম্পূর্ণ হয়। প্রথম ভাগটি হলো ক্যালোরি কমিয়ে আনা। এই পর্যায়ে ধীরে ধীরে খাদ্য তালিকা থেকে অবাঞ্ছিত খাবার গুলিকে বার করে দিয়ে একটি সঠিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা প্রস্তুত করা এবং এবং তা নিয়মিত গ্রহণ করা। এরফলে রোজকার শারীরিক কাজকর্মের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ওজন হ্রাস পেতে সাহায্য করে। এরপর আসে স্থিতিশীল পর্যায়। এই পর্যায়ে মহিলাদের ক্যালোরি কাউন্ট কমিয়ে এনে সেই প্ল্যানটি ধরে রাখা এবং নিজেকে ব্যায়াম এবং মেডিটেশনের মাধ্যমে আইডিয়াল পথে হাঁটা এবং নিজের মানসিক শান্তি বজায় রাখা।
মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্টে শাক-সবজি, ফল-মূল, উপকারী ফ্যাট ও প্রোটিন সহ উপযুক্ত মিনারেল সমৃদ্ধ খাবারও জরুরি। তবে অনেক সময় সঠিক পরিমাপের অভাবে শরীরের চাহিদাতিরিক্ত খাবার গ্রহণ হয়ে যায় যেটি ওয়েট লস জার্নিতে একটা বড় সমস্যার কারণ। তাই দ্রুত ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট নেওয়ার আগে পরিমাণ সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। সঠিক পরিমাণ ও পুষ্টির পরিমাপে সাহায্যের জন্য কিছু টিপস দেওয়া রইলো।
মেয়েদের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে একটি এক সপ্তাহের ডায়েট প্ল্যান দেওয়া হলো, আসুন জেনে নিই।
প্রথম দিনের ডায়েট চার্ট (Day - 1):
ওজন কমানোর জন্য প্রথমেই ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস উষ্ণ গরম জলে পাতি লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে। এরপর সকালের জল খাবারের জন্য ওটস, দুধ , ৩-৪ টি বাদাম কুচি করে নিয়ে ও ব্লু বেরি সহ মিশিয়ে খেতে পারেন। দুপুরে হালকা ভাজা কাবুলি ছোলা, পালংশাক সিদ্ধ , স্যালাড এবং ৪০ গ্রাম মতো পনির খেতে পারেন। সন্ধ্যার জলখাবার হিসেবে খেতে পারেন আপেলকুচি সহ পিনাট বাটার। আর রাতের খাবার হিসেবে চিকেন স্টু বা সাধারণ ভাবে কিছু সবজি ফ্রাই করে খাওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয় দিনের ডায়েট চার্ট (Day - 2):
ওজন কমানোর এই যাত্রার দ্বিতীয় দিনের শুরুটাও উষ্ণ গরম জলের সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। বা এর পরিবর্তে সাধারণ উষ্ণতার জলে হাফ টেবিলস্পুন আপেল সাইডার এবং সাথে ভিনেগার মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এরপর সকালের জলখাবারে একটি স্লাইস ব্রেড পিনাট বাটার দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। নজর রাখতে হবে বাটারের পরিমাণ যেন বেশি না হয়ে যায়। কারণ মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট -এর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পরিমাণ ও সময়। এরপর দুপুরের আগে মিড ডে স্নাংকস হিসেবে যেকোনো একটি ফল খাওয়া যেতে পারে। এরপর দুপুরে সবজি সেদ্ধ , ডাল ও অন্তত ৫০ গ্রাম ওজনের মাছ বা মাংসের টুকরো সহযোগে স্বল্প তেলে ভেজে খেতে হবে। এছাড়া ওটসের ছিলা খাওয়া যেতে পারে। এরপর সন্ধ্যার জল খাবারে ড্রাই রোস্ট মাখানা খাওয়া যেতে পারে। এরপর ডিনারে সিজনাল সবজি সহযোগে সুপ বা স্টু বানিয়ে খেলে অনেকক্ষণ পেট ভর্তি থাকে।
তৃতীয় দিনের ডায়েট চার্ট (Day - 3):
এক্ষেত্রে তৃতীয় দিনেও একই ভাবে লেবু অথবা ভিনিগারের জল পানের মধ্যে দিয়ে দিনটি শুরু করতে হবে। এদিন সকালে ৫০ গ্রাম ডালিয়া ও ১০০ গ্রাম সবজি সহযোগে অল্প তেলের খিচুড়ি খাওয়া যেতে পারে। মধ্যাহ্ন স্ন্যাকস হিসেবে যেকোনো পছন্দের একটি ফল বেছে নিতে পারেন তবে এর জন্য অতি মিষ্টি ফল যেমন কলা, আম ও কাঁঠাল না খাওয়াই ভালো। এদিন দুপুরে ডাল, স্যালাড ও সবজি খেতে পারেন সঙ্গে ৭৫ গ্রাম টকদই খেতে ভুলবেন না। বিকেলের স্ন্যাকসে হোম মেড চানা বানিয়ে খেতে পারেন। দিনের শেষে ডিনারে ডাল সবজি খেতে পারেন।
চতুর্থ দিনের ডায়েট চার্ট (Day - 4):
চতুর্থ দিনের ডায়েট প্ল্যান -এ সকালে একই ড্রিংক দিয়ে দিন শুরু করে সকালের জল খাবারে ডিম টোস্ট ও স্যালাড খাওয়া যেতে পারে। মধ্যাহ্ন স্নাকসে নিয়ম মতো একটি ফল। এদিকে দুপুরের খাবারে বোনলেস চিকেন, ব্রোকলি, পেঁয়াজ ও রসুন সহযোগে হালকা রোস্ট করে নিতে হবে। সঙ্গে টকদই ও স্যালাড অবশ্যই রাখতে হবে। বিকেলের জলখাবারে জলে ভেজানো চিয়া সিড ও লেবুর মিশ্রণ খেতে পারেন। এরপর রাতের খাবারে চিকেন সুপ সিজনাল সবজি দিয়ে সঙ্গে বেবি কর্ন যোগ করে নিতে পারেন।
পঞ্চম দিনের ডায়েট চার্ট (Day - 5):
পঞ্চম দিনের ডায়েট চার্টে আপনি সকালটা একই ভাবে লেবু জল সহকারে শুরু করতে পারেন অথবা চিয়া সীড ভেজানো জল, লেবু সহযোগে পান করা যেতে পারেন। এরপর সকালের জল খাবারে ভেজিটেবল ওমলেট বানিয়ে খেতে পারেন। যেখানে সবজির মধ্যে রাখতে পারেন ক্যাপসিকাম কুচি, ব্রোকলি কুচি , টমেটো কুচি ও পেঁয়াজ লঙ্কা কুচি। এরপর দুপুরের স্ন্যাক্স হিসেবে শসা, আপেল বা যেকোনো কম মিষ্টি সিজনাল ফল খেতে পারেন। দুপুরে ভেজ বার্গার খেতে পারেন ৪০ গ্রাম পনিরের একটি লেয়ার সহযোগে। এদিন বিকেলের জলখাবারে শসা, নুন ও টকদই ফেটিয়ে খেতে পারেন। রাতের খাবারে ভেজ ডাল গ্রহণ করতে পারেন।
ষষ্ঠ দিনের ডায়েট চার্ট (Day - 6):
ষষ্ঠ দিনের জল খাবারে দুধ কর্নফ্লেক্স কয়েকটি আমন্ড বাদাম সহ খেতে পারেন। বেলায় যেকোনো একটি ফল ও দুপুরে একটি ডিম, ৫০ গ্রাম বোনলেস চিকেন ও সবজি ফ্রাই খেতে পারেন। সঙ্গে স্যালাড ও টকদই অবশ্যই রাখবেন। সন্ধ্যার খাবারে ড্রাই রোস্টেড চিনাবাদাম বা ছোলা খেতে পারেন। সঙ্গে রাতের খাবারে সবজির সুপ ও হাফ গ্লাস দুধ খেতে পারেন।
সপ্তম দিনের ডায়েট চার্ট (Day - 7):
ডায়েট প্ল্যানের শেষ দিন অর্থাৎ সপ্তম দিনে সকালে ৫০ গ্রাম সুজির সাথে সবজি দিয়ে পোলাও বানিয়ে খেতে পারেন। বেলায় একটি শসা বা পেয়ারা খেয়ে। দুপুরে ডালিয়ার খিচুড়ি সবজি ও ডিম সিদ্ধ দিয়ে খেতে পারেন। বিকেলের জল খাবারে ছাতু ও পাতি লেবু নুনের সরবত খেতে পারেন। রাতের খাবারে ৩০গ্রাম ডালিয়া ও সবজি দিয়ে পেট ভরিয়ে নিতে পারেন।
উপরের সাত দিনের এই ডায়েট চার্ট টি মেনে চলার সময় এবং খাবার সময় পরিমাণের উপর নজর রাখতে হবে। রোগ হতে গেলে ভাত খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া নিয়মিত ব্যয়াম করা অভ্যেস বানিয়ে নিতে হবে। সর্বপরি ওজন কমানোর এই যাত্রার মধ্যে একাগ্রতার সাথে নিয়ম মেনে খাবার গুলি খেতে হবে। সঙ্গে প্রতিদিন তিন থেকে চার লিটার জল পান করতে হবে। এছাড়াও শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দিতে ডিটক্স ওয়াটার বানিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া প্রতিদিন সাত ঘণ্টার ঘুম শরীরকে নিজের অতিরিক্ত চর্বি গলিয়ে ফেলার কাজে সহায়তা করে। তাই ডায়েট শুরুর আগে এই জিনিস গুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
Frequently Asked Questions
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রতি মাসে ৩ থেকে ৫ কেজি ওজন কমানো স্বাস্থ্যসম্মত। পুষ্টিবিদরা বলেন যদি ৫ কেজির বেশি মাসের হিসেবে ওজন কমায় তবে এটি একটি শারিরীক অসুস্থতার লক্ষণ।
ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় ফল বা খাবার গ্রহণ করা যাবেনা। এছাড়া চর্বি ও ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত তেল দিয়ে ভাজা লুচি, পরোটা বা অতিরিক্ত মশলাদার খাবার একদম খাওয়া যাবেনা। এবং ভাত না খাওয়াই ভালো।
দ্রুতগতিতে শরীরের অতিরিক্ত মেদ গলাতে এবং শরীরের ওজন কমাতে সকালে খালি পেটে যেসব খাবার খাওয়া উচিত:
- আপেল সাইডার ভিনেগার মেশানো জল
- উষ্ণ গরম লেবু মধুর জল
- জিরে ভেজানো জল
- গ্রিন টি
- লবঙ্গ দারচিনি মধু ফোটানো জল
- চিয়া সীড ভেজানো জল
বড়ো বড়ো পুষ্টিবিদদের মতে দুধ বা দুধ থেকে তৈরি কোনো খাবারই ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে না। বরং নিয়মিত যদি কোনো ব্যক্তি পরিমাণ বুঝে দুধ পান করেন তবে সেক্ষেত্রে ওজন কমার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
লেবু একটি অম্লিক ফল এবং এটিতে বেশি পরিমাণে থাকা লেকটিক এসিড আমাদের বিপাকযন্ত্রকে কাজ করার ক্ষমতা দেয়। এতে শরীরের মেটাবোলিজম রেট বৃদ্ধি পায় ফলে খাদ্য ভালো হজম হয় এবং পুষ্টিগুণ শরীরে যুক্ত হয়। এছাড়া এটি দেহের সমস্ত টক্সিন বের করে অতিরিক্ত ফ্যাট গলাতে সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই শরীরের ওজন কমে।