মেয়েদের বিবাহিত জীবনে সবচেয়ে আনন্দময় ও গুরুত্বপূন্য ভূমিকা হল গর্ভবতী হাওয়া। খুশির খবর পেতে কে না চায়? তাই যারা গর্ভবতী হওয়ার বা মা হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা সবসময় ভাবতে থাকেন যে, তার গর্ভধারণ সম্পন্য হল কিনা বা তিনি গর্ভবতী হলেন কিনা।
এমন কিছু শারীরিক লক্ষণ আছে যেগুলি লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, একজন নারী, তিনি গর্ভবতী হয়েছেন কিনা। মা হওয়ার প্রথম সুখবর পেতে এই লক্ষণ গুলি জানা খুবই জরুরি। তাই আজকের এই ব্লগ-এ আমরা জানার চেষ্টা করবো প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলি কি কি এবং গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়।
একটা কথা অবস্যই বলে রাখা দরকার, গর্ভধারণ সংক্রান্ত যেকোন সমস্যার জন্য গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূন্য।
Table of Contents
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়
স্বাধারণত গর্ভ ধরণের প্রথম সপ্তাহ পর থেকেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলি চোখে পরে। তবে অনেক মহিলার ক্ষেত্রে প্রথম মাস শেষ হতে চললেও কোনো শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। তবে পিরিয়ড বা মাসিক শেষ হওয়ার পর থেকেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলি ফুটে উঠতে শুরু করে।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যাবে তা নির্ভর করে মেয়েদের শারীরিক গঠন ও শারীরিক সুস্থ্যতার উপর। গর্ভধারণের আগে ও গর্ভবতী হওয়ার সময় যে নারীর শরীর যত বেশি সুস্থ্য থাকবে তাতো তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলি সুস্পষ্ট হবে।
গর্ভধারণের আগে এবং গর্ভবতী হওয়ার সময় শরীরকে সুস্থ্য ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাতে শুধু গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণগুলি তাড়াতাড়ি সনাক্ত হয় তাই নয়, গর্ভধারণের সময়কালে গর্ভপাতের ঝুঁকি কমিয়ে আনে।
শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেও যদি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ বোঝা না যায়, তাহলে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট দিয়ে গর্ভবতী হয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। তবে পিরিয়ড মিস না হওয়া পর্যন্ত টেস্ট কিট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করা যাবে না, টেস্ট করলেও সঠিক ফল পাওয়া যাবে না।
পিরিয়ডের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়?
গর্ভধারণ যদি সঠিক ভাবে সম্পন্য হয়, তাহলে নিষিক্তকরণ বা Fertilization এর ৬-৭দিন পর থেকে হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (এইচসিজি) নামক এক প্রকার হরমোন প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয়। যা গর্ভাবস্থার হরমোন নামেও পরিচিত। প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট গর্ভাবস্থার এই হরমোনকেই সনাক্ত করে সম্ভাব্য গর্ভধারণের ফলাফল প্রদর্শন করে।
এই হরমোনের সংস্পর্শে আসলেই টেস্ট কিট-এ থাকা লাল দাগটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিষিক্তকরণ বা Fertilization এর ৬-৭দিন পর থেকে এই হরমোন নিঃস্বরণ হওয়া শুরু হলেও, দৃঢ় হতে সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগে। তাই Fertilization এর পর বা পিরিয়ড মিস হওয়ার পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করার জন্য কম পক্ষে ১৪-১৫ দিন অপেক্ষা করা প্রয়োজন।
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার অনুভূতি যে একটি মেয়ের কাছে কতটা আনন্দের তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিটি নারী তার গর্ভধারণের সুখবরটি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব জানতে চান। ডাক্তার কখন নিশ্চিত করে বলবেন তার অপেক্ষায় থাকতে চান না। শারীরিক কিছু পরিবর্তন ও লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে গর্ভাবস্তা বোঝার চেষ্টা করেন।হ্যাঁ, গর্ভধারণের পর এমনকিছু শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, যা দেখে বোঝা সম্ভব কোনো নারী গর্ভবতী হয়েছেন কিনা। আসুন প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলি জেনে নেওয়া যাক।
বমি হওয়া বা বমি ভাব:
গর্ভবতী হওয়ার সাথে সাথে শরীরের বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন হয়। এই হরমোন পরিবর্তনের জন্যই গর্ভবতী নারীর হঠাৎ হঠাৎ বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব লক্ষ্য করা যায়, যাকে চিকিৎসার ভাষায় মর্নিং সিকনেস বলা হয়। তাই মিলনের কিছুদিন পর থেকেই হঠাৎ বমি হওয়া বা বমি ভাব গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ হিসেবেই ধরা হয়।
পিরিয়ড মিস হওয়া:
প্রেগনেন্সির সময়কালে পিরিয়ড একেবারেই বন্ধ থাকে, যার ফলে প্রেগনেন্সি নিশ্চিত হলেই পিরিয়ড মিস হয়ে যায়। মিলনের আগে যদি পিরিয়ড স্বাভাবিক নিয়মে হয়, এবং মিলনের পর যদি পিরিয়ডের সময় আসলেও পিরিয়ড বন্ধ থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে নিশ্চিত গর্ভবতী হয়েছেন।
স্তনগুলিতে পরিবর্তন হওয়া:
গর্ভবতী হওয়ার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই স্তনগুলিতে পরিবর্তন হয়। স্তনগুলি ফুলে যায়, ব্যাথা হয়, তার সাথে সাথে নিপিল বা এরিওলাতে আকার ও রঙের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। হঠাৎ এই শারীরিক পরিবর্তনকে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ হিসেবেই ধরা হয়।
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া:
প্রেগনেন্সির সময় স্বাভাবিক ভাবেই গর্ভাশয়ে পরিবর্তন হয়, যার ফলে মূত্র থলিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। তাই প্রেগনেন্সির সময় ঘন ঘন প্রস্রাব পায়। ক্রমাগত এই কার্যকলাপ হওয়াকে গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবেই ধরা যেতে পারে।
অনিয়মিত ক্ষিদে পাওয়া :
গর্ভবতী অবস্থায় নিয়মিত ভাবে খাওয়ার ইচ্ছা ও ক্ষিদে দুটোই চলে যায়। সময় মতো খাওয়ার ইচ্ছা নাও হতে পারে, আবার যখন তখন ক্ষিদেও পেতে পারে। অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পরে খাওয়ার সময়ের তারতম্য গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ বলে মনে করা হয়।
মুড সুইং:
গর্ভবতী অবস্থায় ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হয়। কখনও মেজেজ খিটখিটে থাকে, কখনো আবার ফুরফুরে। ঘন ঘন মেজেজ পরিবর্তনকে মুড সুইং বলে। যৌন সম্পর্কের কিছুদিন পর থেকে যদি এই মুড সুইং দেখা যায় তাহলে এটি প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ।
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ হিসাবে যে যে শারীরিক সমস্যা হতে পারে:
পেতে ব্যাথা:
গর্ভবতী অবস্থায় গর্ভাশয়ে অর্থাৎ পেটে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে সম্ভাব্য গর্ভবতীর পেটে ব্যাথা ও খিঁচুনি ভাব লক্ষ্য করা যায়। তারসাথে পেট হালকা ফুলতেও দেখা যেতে পারে। এটি হল প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ।
কোষ্ঠকাঠিন্য:
যেহেতু প্রেগনেন্সির ফলে পেটে ব্যাথা হয় তাই কোষ্টকাঠিন্যের মতো শারীরিক সমস্যাও দেখা যেতে পারে।
শারীরিক ক্লান্তি:
গর্ভবতী অবস্থায় শরীর দুর্বল হয়ে যায়, এবং শারীরিক ক্লান্তি লক্ষ্য করা যায়। এর কারণ শরীরে প্রোজেস্টেরন নামে হরমোনের বৃদ্ধি, যা প্রেগনেন্সির একটি স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন। ফলত, হঠাৎ করে শরীরে দুর্বলতা ও ক্লান্তি দেখা দিলে বুঝতে হবে এটি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া:
যদিও এটা খুব কম মহিলার মধ্যেই দেখা যায়, তবুও হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ।
তাপমাত্রা ওঠা নামা:
যেহেতু গর্ভবতী হলে শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন হয় এবং তার সাথে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা অনুভব হয়, তার ফলে শরীরের তাপমাত্রা উঠানামা করতে পারে এবং জ্বরও আসতে পারে।
মাথা যন্ত্রনা:
গর্ভবতী অবস্থায় সবসময়ই কম বেশি মাথাধরার মতো সমস্যা হয়। খুব বেশি পরিমানে হলে মাথা যন্ত্রনাও হতে পারে।
রক্তক্ষয়:
পিরিয়ড বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও গর্ভাশয়ের পরিবর্তনের ফলে খুব অল্প পরিমানে রক্ত ক্ষরণ হতে পারে।
উপরি উক্ত সবকটি লক্ষনই হল গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ। তার মানে এই নয় যে সব মহিলারই সবকটি সমস্যা হবে। শারীরিক গঠন ও শারীরিক সুস্থ্যতার উপর ভিত্তি করে এই লক্ষণ গুলি কমবেশি হতে পারে। তবে অবস্যই একাধিক লক্ষণ একসাথে লক্ষ্য করা যাবে। এর ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আগেই জেনে ফেলা সম্ভব গর্ভবতী হওয়ার সুখবর।
তবে একটা কথা অত্যন্ত জরুরি, এই লক্ষণ গুলি শরীরে দেখা দিলে অবশ্যই গাইনোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া অবস্যই প্রয়োজন। গর্ভবতী অবস্থায় সন্তান ও মাকে সুস্থ্য রাখা অত্যন্ত জরুরি আর তার জন্য প্রয়োজন ডাক্তারের পরামর্শ।
Frequently Asked Questions
হ্যাঁ, অবশ্যই গর্ভবতী হতে গেলে মোটা হওয়া জরুরি। রোগা বা স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজনের শরীরে বাচ্চা নেওয়া বা গর্ভবতী হাওয়া একেবারেই উচিত নয়। গর্ভবতী হতে গেলে মহিলাদের স্বাভাবিকের তুলনায় ১০-১৫ কিলো ওজন বাড়াতে হয়। তার জন্য খেতে পারেন কিসমিস, জেনেনিন প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত। এছাড়াও, প্রেগনেন্ট অবস্থায় ওজন বাড়ানোর জন্য ও সক্রিয় থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, যেমন- ফলমূল, শাকসবজি, ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।
হ্যাঁ, গর্ভবস্থায় হস্ত মৈথুন করা যায় এবং এটি নিরাপদ। গর্ভবস্থায় অনেক মহিলারই সহবাসের ইচ্ছা জাগতে পারে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় সহবাস করলে গর্ভাশয়ে ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে। তাই সহবাস না করে হস্ত মৈথুন করাই নিরাপদ। কিন্তু, শারীরিক কোনও জটিলতা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
বিঃদ্রঃ – কোনো কিছুই অতিরিক্ত করা উচিত নয়, অতিরিক্ত হস্ত মৈথুনেও শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। জেনেনিন, কতদিন পর পর হস্ত মৈথুন করবেন এবং হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর দিক।