vomiting in running bus

গাড়ি ও বাসে উঠলেই বমি পায়? বাসে বমি বন্ধ করার উপায়

বাসে বমি হওয়া প্রধানত মোশন সিকনেসের কারণে ঘটে যখন শরীর বাসের গতির সাথে অভ্যস্ত হতে পারেনা, তখন চোখ, কান এবং মস্তিষ্কের মধ্যে তথ্যের অমিল ঘটে ফলে বমির অনুভূতি সৃষ্টি হয়বাসে বমি না হওয়ার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে। প্রথমত, জানালার পাশে বসে দূরের কোনো স্থানে নজর রাখতে চেষ্টা করুন। দ্বিতীয়ত, ভারী খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং হালকা খাবার নিন। তৃতীয়ত, বাসের ভিতরের বাতাস শুদ্ধ রাখতে জানালা কিছুটা খুলে রাখুন। চতুর্থত, পুদিনা বা লেবুর তেল ব্যবহার করে এর সুবাস শ্বাসে নিতে পারেন। পঞ্চমত, অ্যান্টিহিস্টামিন বা বমি প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন, বিশেষত দীর্ঘ যাত্রার আগে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামও উপকারী হতে পারে। এগুলো চেষ্টা করে দেখুন আশা রাখি ভালো ফল পাবেন

     বাসে উঠলে বমি হয় কেন, কোন ধরনের মানুষদের বাসে উঠলে বমি হয়, বাসে বমি বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক

Table of Contents

বাসে বমি হওয়ার কারণ

বাসে বমি হওয়ার পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:

  • MOTION SICKNESS (মোশন সিকনেস): বাসের চলাচলের কারণে কিছু মানুষের শরীরের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা ঘটে, যা বমি ভাব সৃষ্টি করে। এটি মূলত চোখ, কান, এবং মস্তিষ্কের মধ্যে তথ্যের অমিলের কারণে ঘটে।
  • জ্বালানির গন্ধ: অনেকেই পেট্রল ও ডিজেল এর গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। তাই বসে বা গাড়িতে উঠলেই পোড়া পেট্রল ডিজেল এর গন্ধে বমি ভাব হয় এবং বমি হয়।
  • অতিরিক্ত ঝাকুনি: গাড়িতে বা বসে চড়লে ঝাঁকুনির হয় অনেক বেশি। অতিরিক্ত ঝাঁকুনির সহ্য করতে পারেন না অনেকেই। তাই ভরা পেটে অতিরিক্ত ঝাঁকুনির ফলে পেটের ভেতরের খাবার বাইরে বেরিয়ে আসে।
  • খালি পেট: অনেকেই খালি পেটে ভ্রমণ যাত্রা করে থাকেন।  খালি পেটে শরীর ক্রমাগত এদিক ওদিক হেলতে থাকলে গা-গুলিয়ে ওঠে এবং বমি হয়।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা : কখনও কখনও বাসে বাতাসের মান খারাপ হলে বা গন্ধযুক্ত পরিবেশে থাকলে এটি বমি ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
  • মানসিক চাপ : ভ্রমণের সময় উদ্বেগ, অস্বস্তি, বা ভয়ের কারণে মনোসংযোগ বিঘ্নিত হতে পারে, যা বমি অনুভূতি বাড়ায়।
  • খাবারের প্রভাব : বাসে উঠার আগে ভারী বা মসলাদার খাবার খেলে তা পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে, যা বমির কারণ হতে পারে।
  • ভ্রমণ অভ্যাস : কিছু মানুষের জন্য যাত্রার সময় অভ্যস্ত হয়ে ওঠা কঠিন হয়, বিশেষ করে যাঁদের মোশন সিকনেসের ইতিহাস রয়েছে।

এই কারণে গুলো সচেতন থাকলে বাসে যাত্রা করার সময় বমি প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে।

কোন ধরনের মানুষদের বাসে উঠলে বমি হয়

বাসে উঠলে বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন কিছু শ্রেণীর মানুষের মধ্যে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়:

  • মোশন সিকনেসের ইতিহাস : যাঁদের পূর্বে মোশন সিকনেস (যানবাহনে অসুস্থতা) হয়েছে, তাঁদের বমির প্রবণতা বেশি।
  • শিশুরা : সাধারণত শিশুরা মোশন সিকনেসের জন্য অধিক সংবেদনশীল হয়ে থাকে।
  • অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা : কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন মাইগ্রেন বা কান সম্পর্কিত সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা বাসে উঠলে বমির অনুভূতি অনুভব করতে পারেন।
  • মানসিক চাপ বা উদ্বেগ : উদ্বেগগ্রস্ত ব্যক্তিরা যাত্রা করার সময় বমি অনুভব করতে পারেন।
  • অভ্যাসের অভাব : যারা নিয়মিত বাসে ভ্রমণ করেন না, তারা নতুন পরিবেশে অসুস্থ বোধ করতে পারেন। 

এই সকল কারণের জন্য বাসে উঠলে বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বাসে বমি বন্ধ করার উপায়

বাসে বমি বন্ধ করার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে। নিচে এই উপায়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

  • অবস্থা নির্বাচন: বাসে উঠার সময় জানালার পাশে বসুন। জানালার কাছে বসলে আপনি বাইরের দৃশ্য দেখতে পাবেন, যা আপনাকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করবে। জানালায় কিছুটা বাতাস পাওয়া যায়, যা বমির অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে।
  • নজর ফোকাস করা: বাসে বসে থাকার সময় দূরের কোনো স্থানে নজর দিন, যেমন রাস্তার মাঝখানে বা পাহাড়ের চূড়ায়। এটি আপনার মস্তিষ্কের মধ্যে তথ্যের অমিল কমাতে সাহায্য করবে এবং বমির অনুভূতি কমিয়ে আনবে।
  • খাবারের যত্ন: বাসে যাত্রার আগে ভারী বা মসলাদার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। হালকা খাবার যেমন বিস্কুট বা ক্র্যাকার খান। এই ধরনের খাবার হজমে সহজ এবং পেটে অস্বস্তি কমাতে সহায়ক।
  • জল পান করা: বাসে উঠার আগে এবং চলাকালীন সময়ে পরিমাণমতো জল পান করুন। জল আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করবে, তবে বেশি জল পান করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি পেট ভর্তি করে ফেলতে পারে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: গভীর শ্বাস নেওয়া এবং ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এটি আপনার শরীরকে শিথিল করতে সাহায্য করবে এবং উদ্বেগ কমাবে। শ্বাসের সাথে সাথে মনে শান্তি নিয়ে আসার চেষ্টা করুন।
  • অ্যান্টিহিস্টামিন বা বমি প্রতিরোধক ওষুধ: যদি আপনি জানেন যে আপনাকে দীর্ঘ সফরে যেতে হবে এবং মোশন সিকনেসের ইতিহাস রয়েছে, তাহলে ডাক্তারি পরামর্শে কিছু অ্যান্টিহিস্টামিন বা বমি প্রতিরোধক ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন। এই ধরনের ওষুধ সাধারণত যাত্রার আগে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • জিঙ্গার এবং পুদিনা: প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে জিঙ্গার বা পুদিনার ব্যবহার করতে পারেন। জিঙ্গার চা বা গুঁড়া জিঙ্গার গ্রহণ করলে বমির অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে। পুদিনার সুবাসও ভালো কাজ করে এবং মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে।
  • সঠিক অবস্থান বজায় রাখা: যাত্রার সময় সঠিকভাবে বসে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেছনে ঝুঁকে বসা বা খুব বেশি নড়াচড়া করলে অসুস্থতা বেড়ে যেতে পারে। সোজা হয়ে বসুন এবং পিঠ সোজা রাখুন।
  • শান্তি বজায় রাখা: যাত্রার সময় নিজের সাথে শান্তি বজায় রাখা জরুরি। হঠাৎ করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লে আপনার শরীর খারাপ অনুভব করতে পারে। গান শোনা, মেডিটেশন বা শান্তিপূর্ণ কিছু ভাবা আপনার মনোযোগ বিভক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
  • সহায়তা নেওয়া: যদি আপনি নিজেকে অসুস্থ বোধ করেন, তবে বাসের কর্মচারী বা সহযাত্রীদের সাহায্য চাইতে পারেন। তারা আপনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সাহায্য করতে পারে।

বাসে বমি বন্ধ করার ওষুধ

বাসে বমি বন্ধ করার জন্য কিছু সাধারণ ওষুধ রয়েছে, যেগুলি মোশন সিকনেস (যানবাহনে অসুস্থতা) প্রতিরোধে কার্যকরী। নিচে কিছু পরিচিত ওষুধের নাম উল্লেখ করা হলো:

  • ডাইমেনহাইড্রিনেট (Dramamine) : এটি খুব জনপ্রিয় একটি অ্যান্টিহিস্টামিন, যা মোশন সিকনেসের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে।
  • মেক্লিজিন (Meclizine): এই ওষুধটি সাধারণত চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে পাওয়া যায় এবং মোশন সিকনেসের কারণে হওয়া বমি ও বমির অনুভূতি কমাতে কার্যকরী।
  • সক্লোপামিন (Scopolamine) : এটি একটি প্যাচের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয় যা পিছনের কানে লাগানো হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদী ভ্রমণের জন্য উপযোগী।
  • জিঙ্গার (Ginger) : প্রাকৃতিক উপায়ে বমি কমাতে জিঙ্গার বা জিঙ্গার চা খাওয়া উপকারী হতে পারে।
  • অ্যান্টিহিস্টামিন (Antihistamines) : অন্যান্য অ্যান্টিহিস্টামিন যেমন ডেফেনিহাইড্রামিন (Benadryl) ও মোশন সিকনেসে সাহায্য করতে পারে।

এই ওষুধগুলি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন, বিশেষত যদি আপনি অন্য কোনো ওষুধ গ্রহণ করছেন বা বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে।

অন্যান্য পরামর্শ

মোশন সিকনেসের জন্য কিছু টিপস

বাসে ওঠার আগে কিছু পুষ্টিকর স্ন্যাকস নিতে পারেন, যা সহজে হজম হয়।কিছুক্ষণ পরপর জল পান করুন। এটি আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে।বাসে চলাকালীন কখনো বসে না থেকে মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে কিছু সময় হাঁটুন, যদি সম্ভব হয়।

 

ভ্রমণের প্রস্তুতি

যদি আপনি দীর্ঘ যাত্রায় যাচ্ছেন, তবে আগেই প্রস্তুতি নিয়ে যান। প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে নিয়ে যান।ভ্রমণের আগে পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিন, যাতে আপনার শরীর শক্তি পায়।

 

সঠিক যানবাহন নির্বাচন

যদি আপনি মোশন সিকনেসের প্রবণতা থাকে, তবে সম্ভব হলে বাসের পরিবর্তে বিমান বা ট্রেন ব্যবহার করুন, যেগুলো সাধারণত কম গতি পরিবর্তন করে।

বাসে বমি বন্ধ করার জন্য আপনার সচেতনতা ও প্রস্তুতি প্রয়োজন। মোশন সিকনেসের সমস্যা প্রতিরোধ করতে হলে উপরে উল্লেখিত উপায়গুলো অনুসরণ করা উচিত। সঠিক খাদ্য গ্রহণ, সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বাসে যাত্রার আগে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা জরুরি, যাতে আপনি ভ্রমণটিকে উপভোগ করতে পারেন। যদি আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য ভ্রমণ করেন, তবে আগের দিন প্রস্তুতি নিয়ে যান। এই ধরনের প্রস্তুতি আপনার ভ্রমণকে আরো আনন্দময় এবং আরামদায়ক করবে।

FAQ (Frequently Asked Questions)

বমির ট্যাবলেট খাবার আগে, খাবারের পর, বা ভ্রমণের পূর্বে খাওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি মোশন সিকনেস বা বমির সমস্যা থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রিসক্রাইব করা ডোজ অনুযায়ী ট্যাবলেট নিতে হবে। তবে লম্বা সময় ধরে বমি হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

বমি বন্ধ করতে কিছু খাবার উপকারী হতে পারে। জিঙ্গার, পুদিনা, এবং হালকা স্ন্যাকস যেমন বিস্কুট বা ক্র্যাকার খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া, লেবুর জল বা সাদা চা পান করাও সহায়ক। এই খাবারগুলো পেটকে শিথিল করতে এবং বমির অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে। শুখনো মুড়ি খেলেও বমি ভাব বন্ধ হয়।

গান গাওয়ার সময় কিছু মানুষের জন্য বমি বমি ভাব হতে পারে। এটি সাধারণত গলায় অতিরিক্ত চাপ পড়া বা শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যার কারণে ঘটে। এছাড়া, যদি গানের তালে শরীর নড়াচড়া হয় এবং চোখের দৃষ্টিতে অস্বাভাবিকতা তৈরি হয়, তাহলে মোশন সিকনেসও হতে পারে।

গুনগুন করলে বমি বমি ভাব কমতে সাহায্য করতে পারে। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রশান্তি এনে দেয় এবং শরীরকে শিথিল করে। গুনগুন করার ফলে মনোযোগ বেড়ে যায়, যা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। ফলে, যাত্রার সময় এই পদ্ধতি বমির অনুভূতি দূর করতে কার্যকর হতে পারে।

লেবু খেলে বমি কমাতে সাহায্য হতে পারে। লেবুর রস বা জলে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে পেটের অস্বস্তি কমে এবং ডাইজেস্টিভ ট্র্যাককে শিথিল করে। এর তীব্র স্বাদ ও সুগন্ধ বমির অনুভূতি দূর করতে সাহায্য করে, তাই বমি বমি ভাব কমাতে এটি কার্যকর।