Effective ways to reduce acne from the inside

ব্রণ কেন হয়? ভেতর থেকে ব্রণ দূর করার উপায়!

আমরা প্রায় সকলেই জীবনে কখনো না কখনো পিম্পল বা ব্রণর মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। সামনেই পুজো আসছে। তাই কি ভাবে এই সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায় তা জেনে নেওয়া যাক। সবার প্রথমে আমাদের জানতে হবে এই পিম্পল বা ব্রণ কেন হয়। তার সাথে সাথে আমরা ভেতর থেকে ব্রণ দূর করার উপায় জানবো।

Table of Contents

যখনি আমাদের মুখে ব্রণ দেখা যায় তখনি আমরা বাইরে থেকে কোনো প্রোডাক্ট মেখে বা ট্রিটমেন্ট করে তা নির্মূল করার চেষ্টা করি বা ফাটিয়ে ফেলি। যেটা একদমই করা উচিত নয়। বরং বার বার যাতে ব্রণ বা পিম্পল না হয় তার জন্য আগে থেকে সতর্ক হাওয়া উচিত। এবং শরীরের ভেতর থেকে  যত্ন নেওয়া উচিত।

ব্রণ কেন হয়?

ব্রণ হওয়ার আগেই তার জন্য সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আর তার জন্য জানতে হবে ব্রণ আসলে  কি এবং ব্রণ কেন হয়? আমারদের শরীরে পিম্পল বা ব্রণ দেখতে পাওয়া যায় সেবাসিয়াস গ্রন্থির কারণে। সেবাসিয়াস গ্রন্থি শরীরের ভেতরে প্রচুর পরিমানে তেল জাতীয় উপাদান রিলিস করে। এই তেলের ভেতরে থাকে একটি উপাদান, যাকে আমরা সিবাম বলে থাকি। এছাড়াও এর সাথে সাথে ক্যারোটিন নামক এক ধরণের পদার্থ নির্গত হয়। এই তেলের ভেতর থাকা সিবাম ও ক্যারোটিন নির্গত হওয়ার ফলে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ থাকে।

কিন্তু ত্বকের যে সমস্ত ছিদ্র পথ দিয়ে এই পদার্থ গুলি বাইরে বেরিয়ে আসে, সেখানে যদি কোনো রকম ব্লকেজ সৃষ্টি হয় তাহলে এই পদার্থ গুলি ওই স্থানে জমতে থাকে এবং ব্রণ বা পিম্পল তৈরী হয়। এখন প্রশ্ন হলো, এই ব্রণ বা পিম্পল কখন থেকে দেখা যায়? আমরা যখন ছোট থেকে বড় হই, আমাদের শরীরে অনেক রকম পরিবর্তন আসে। যার ফলে প্রচুর পরিমানে হরমোনও রিলিস হয়। আর সেই সমস্ত হরমোন সেবাসিয়াস গ্রন্থিকে বাধ্য করে প্রচুর পরিমানে অয়েল রিলিস করতে। প্রচুর পরিমানে অয়েল রিলিস হওয়ার কারণে আমাদের শরীরে ব্রণ দেখা যায়।

ভেতর থেকে ব্রণ দূর করার উপায়!

এখন আমাদের এটা জানতে হবে যে কিভাবে আমরা এই ব্রণ বা পিম্পল এর হাত থেকে রক্ষা পাব। তাই আমি এখন আপনাদের সাথে ব্রণ দূর করার উপায় শেয়ার করবো, যেগুলো মেনে চললে আপনি এই ব্রণ বা পিম্পল এর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারবেন।

Acne before after result

#1/10: যদি আপনি ব্রণ বা পিম্পল এর হাত থেকে রক্ষা পেতে চান তাহলে আপনাকে মনে রাখতে হবে, যে শুধু মাত্র ত্বকের উপর থেকে প্রোডাক্ট মাখলে বা ট্রিটমেন্ট করলে কখনোই সম্পূর্ণ ভাবে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এই সমস্যা থেকে পুরোপুরি ভাবে বেরিয়ে আসতে হলে আপনাকে নিজেকে ভেতর থেকে সম্পূর্ণ ভাবে ক্লিন করতে হবে। তাহলেই এই সমস্যা থেকে পুরোপুরি ভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে।

#2/10: আপনাকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার জল অবশ্যই পান করতে হবে। ব্রণর সমস্যা নির্মূল করার জন্য প্রচুর পরিমানে জল খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূন্য। আমাদের শরীরে প্রতি নিয়ত যে টক্সিট সাবটেন্স উৎপন্ন হয়, সেগুলো জল পান করার ফলে খুব ভালো ভাবে আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

#3/10: পর্যাপ্ত পরিমানে জল পান করার পরও যদি ব্রণ বেরোনো বন্ধ না হয়, আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে কোন কোন খাবার গুলি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে আর কোন গুলিকে বাদ দিতে হবে।

#4/10: যদি আপনার প্রচুর পরিমানে ব্রণ বা পিম্পল এর সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনার  খাদ্য তালিকা থেকে ডেইরি প্রোডাক্ট যেমন দুধ বা দই জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিতে হবে। এছাড়াও তৈলাক্ত খাবার যেমন তেলেভাজা, চপ, সিঙ্গারা, যেগুলিতে প্রচুর পরিমানে তেল থাকে সেগুলি খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

#5/10: আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় গ্রিনটি যোগ করুন। নিয়মিত গ্রিনটি পান করা খুবই গুরুত্বপূন্য। আপনি যদি প্রতিদিন অন্তত একবার গ্রিনটি পান করেন তাহলে আপনার ব্রোনোর সমস্যা ক্রমশ কমে আসবে। এবং একসময় আসবে যখন এই সমস্যা সম্পূর্ণ রূপে নির্মূল হয়ে যাবে।

#6/10: প্রতিদিন সকালে উঠে কাঁচা হলুদ খাওয়া অভ্যেস করুন। এবং আপনার রান্নায় অবশ্যিই হলুদ যোগ করুন। হলুদ ত্বকের ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখবে ফলে ব্রণ বেরোনো বন্ধ হবে। তার সাথে সাথে ত্বককে উপর থেকে উজ্জ্বল ও মসৃন করবে।

#7/10: এরপর যে উপাদানটি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন সেটি হলো পালং শাঁখ। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালং শাঁখ রাখুন। প্রতিদিন পালং শাঁখ খাওয়া অভ্যেস করলে খুব তাড়াতাড়ি ব্রণ বা পিম্পল থেকে মুক্তি পাবেন।

#8/10: অতি অবশ্যই ‘ভিটামিন এ’ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। যে সমস্ত খাবারে ‘ভিটামিন এ’ এর পরিমান বেশি থাকে, যেমন বিন, গাজর, পালং শাঁখ ও বিভিন্ন ধরণের ফল, সেগুলি নিয়মিত খেলে ব্রোনোর হাত থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবেন। ব্যাস্ত জীবনে যদি এতকিছু জোগাড় না করতে পারেন, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ‘মাল্টি ভিটামিন’ ওষুধ খেতে পারেন।

#9/10: সর্বশেষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূন্য সমাধান হলো ব্যায়াম। আপনি প্রতিদিন যে কোনো ধরণের ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করতে পারেন, অবশ্যই যেগুলো আপনার শরীর থেকে ঘাম বের করতে সাহায্য করবে। আপনি চাইলে জিম ও যেতে পারেন।  আসলে ব্যায়াম করার ফলে আমাদের শরীর থেকে খুব ভালো ভাবে ঘাম নির্গত হয়, এবং আমাদের শরীরে যেসব টক্সিট সাবটেন্স রয়েছে বা উৎপন্ন হয় তা সহজেই ঘামের সাথে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে। ফলে ব্রণ বা পিম্পল এর মতো সমস্যা হতে পারেনা।

#10/10: উপরের টিপস গুলির সাথে সাথে আপনাকে এটিও মাথায় রাখতে হবে, আপনার ত্বকে যদি কোনো পিম্পল বের হয় তাহলে কখনোই সেই পিম্পল কে নখের সাহায্যে ফাটানো যাবে না। কারণ যখনি আমরা আমাদের ত্বকের পিম্পল কে ফাটিয়ে দেই, তখন সেখানে গর্তের সৃষ্টি হয়। আর সেই গর্তে প্রচুর পরিমান ব্যাকটেরিয়া জমতে থাকে এবং ছিদ্র পথের মাধ্যমে আমাদের শরীরের ভেতর প্রবেশ করে। যার ফলে ফাটিয়ে ফেলা সেই স্থানে পুনরায় আরো বড় পিম্পল তৈরী হতে পারে। তাই কখনোই পিম্পল কে নখ বা অন্য ধারালো কিছুর সাহায্যে ফাটিয়ে ফেলা উচিত না।

মুখে ছোট ছোট দানা দূর করার উপায়

অনেকেরই কপালে, মুখে, চোখের দুই পাশে এবং নাকের উপরে ছোট ছোট দানা দানা বা গুটি গুটি ভাব দেখতে পাওয়া যায়। ছোট ছোট ঘামাচির মতো এই দানা গুলো মূলত ত্বকের ভেতরে থাকে। মুখের এই দানা গুলিকে টাইনি বাম্প বা মিলিয়া বলা হয়ে থাকে। কিছু ঘরোয়া প্রদ্ধতি অবলম্বন করে এই ছোট ছোট দানা বা টাইনি বাম্প দূর করা সম্ভব। এখন দেখে নেওয়া যাক ঘরোয়া প্রদ্ধতিতে মুখে ছোট ছোট দানা দূর করার উপায়:

প্রথম ধাপ:

প্রথমেই মুখ ভালো করে ক্লিন করে নিতে হবে। তার জন্য একটি ক্লিনজার বানিয়ে নিতে হবে। একটি কাঁচের পাত্রে এক চামচ ব্যাসন, এক চামচ মুলতানি মাটি ও এক চামচ হলুদের গুলো ভালোকরে মিশিয়ে নিতে হবে। আপনি চাইলে এই মিশ্রণটি শুখনো অবস্থায় সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। তারপর পরিমান মতো গোলাপ জল ( অয়েলি স্কিনের জন্য) বা দুধ ও মধু ( ড্রাই স্কিনের জন্য ) মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরী করে নিতে হবে।
এই মিশ্রণ টি সারা মুখে লাগিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর পরিষ্কার জলে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এর ফলে মুখে জমে থাকা ময়লা দূর হবে এবং খসখসে ভাব চলে যাবে।

দ্বিতীয় ধাপ:

দ্বিতীয় ধাপে মুখে স্ক্র্যাবিং এর জন্য একটি স্ক্রাবার তৈরী করতে হবে। কাঁচের পাত্রে এক চামচ চালের গুঁড়া, এক চামচ মুলতানি মাটি, দেড় চামচ টকদই ও এক চামচ টমেটোর রস নিয়ে ভালোকরে মিশিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে অল্প পরিমানে জল নিতে পারেন।
মিশ্রণ টি হাতের সাহায্যে সারা মুখে মাখিয়ে নিয়ে ২-৩ মিনিট হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর আরও ৫-৭ মিনিট ওই ভাবেই রেখে দিতে হবে। তারপর একটি কটন টিসু বা ভেজা টাওয়াল দিয়ে ভালো করে মুছে নিয়ে, ঠান্ডা জলে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

তৃতীয় ধাপ:

মুখ ধুয়ে ভালো করে মুছে নেওয়ার পর, মুখে মশ্চেরাইজার লাগাতে হবে। ঘরোয়া প্রদ্ধতিতে মশ্চেরাইজার তৈরী করতে, প্রথমে একটি কাঁচের পাত্রে এক চামচ এলোভেরা জেল নিয়ে তারসাথে এক চামচ টি ট্রি অয়েল ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এই টি ট্রি অয়েল এ রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। ফলে মুখের ব্রণ ও টাইনি বাম্প সহজেই কমে যায়। এই মিশ্রণটি তৈরী করে মাসখানেকের জন্য সংরক্ষণও করা যেতে পারে।
এর পর এই মশ্চেরাইজারটি ভালোকরে মুখে মাখিয়ে সারা রাত রেখে দিন। এবং সকালে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

এই প্রদ্ধতি টি এক টানা ৭-১০ দিন অনুসরণ করলে এর ফলাফল চোখে পড়বে। এবং ক্রমাগত করতে থাকলে মুখে ছোট ছোট দানা অর্থাৎ টাইনি বাম্প বা মিলিয়া একেবারে চলে যাবে।