আমাদের রোজকার জীবনে লেবু হলো ভিটামিন-সি এর সবচেয়ে বড় উৎস। দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রত্যেকেই অল্প হলেও লেবু খেয়ে থাকি। লেবু খাওয়ার অনেক উপায় থাকলেও বেশিরভাগ মানুষ কোনো অন্য খাবারের স্বাদ আরও বেশি করে উপভোগ করতে লেবুর রস যোগ করে খেয়ে থাকেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে লেবুর সরবত তীব্র গরমের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। লেবু এমন একটি ফল যার অনেক প্রকারভেদ থাকলেও উপকারিতা সবারই প্রায় একই। তবে ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা জানলে নিজে থেকেই লেবুকে নিত্য দিনের সঙ্গী করে নিতে বাধ্য হবেন।
Table of Contents
ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা আসলে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয়। এটি শরীরে প্রবেশ করতে থাকলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রতিদিন লেবু পানি খেলে আমাদের শরীরের কোষে ক্ষতিকারক ক্যান্সার জীবাণু ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হতে দেয়না। এছাড়াও এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্যকরে। শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে দিয়ে শরীরকে ডিটক্সিফাই করে।
চলুন দেখে নিই এক টুকরো লেবু আমাদের কি কি উপকার দিতে পারে:
ক্যান্সারের মতো মারণ ব্যাধি প্রতিরোধ:
লেবুতে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ রয়েছে সঙ্গে রয়েছে ভিটামিন সি এর ভরপুর সহায়তা। যা আমাদের শরীরকে মারণ ব্যাধি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন যদি কোনো ব্যক্তি লেবু জল খান তবে ক্যান্সারের জীবাণু শরীরে বাসা বাঁধতে পারেনা।
সুস্থ পাকস্থলী:
ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পাকস্থলীর যত্ন। যেসব ব্যক্তি সারা বছরই কোনো না কোনো পেটের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য লেবু খুব উপকারী। বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়ার মতো অসস্তিজনক রোগ গুলির ক্ষেত্রে লেবু উপশম করে। এসব ক্ষেত্রে লেবু, জল, মধু ও নুনের মিশ্রণ এক গ্লাস খাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক মুক্তি পাওয়া যায় পেটের ব্যথা থেকে। এর মধ্যে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট হজম ক্ষমতা বাড়ায় ফলে পাকস্থলী থাকে সুস্থ।
সতেজ ফুসফুস:
লেবুতে থাকা বিশেষ কিছু এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ফুসফুসে জীবাণু বাসা বাঁধতে দেয়না। শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে সুস্থ্য ও সতেজ রাখে ফুসফুসকেও।
ইনফেকশন কমাতে লেবুর উপকারিতা:
রোজকার জীবনে বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনে হোক বা আবহাওয়া পরিবর্তনে জ্বর, শর্দি, কাশি আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী বলা যায়। এই সব ইনফেকশনের সাথে লড়াই করতে লেবু খুব উপকারী। এছাড়া মূত্রনালীর ইনফেকশন সারানোর ক্ষেত্রে লেবুর উপকারিতা অনস্বীকার্য।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
রোজকার জীবনের হাতের কাছে থাকা ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা জেনে তা নিয়ম মেনে খাওয়া শুরু করলে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যেসব ব্যক্তিরা খাবারে যথেষ্ঠ পটাশিয়াম গ্রহণ করেন না তারাই মূলত হৃৎপিণ্ডের রোগে ভোগেন। লেবুতে থাকা উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম এর ফলে ঘাটতি পূরণ হয়ে স্বাভাবিক ছন্দে থাকে হৃদযন্ত্র।
ত্বক সুন্দর রাখে:
আমাদের ত্বকের সমস্যার মূলে থাকে শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত টক্সিন গুলো। আর লেবু সেই সমস্ত টক্সিন শরীর থেকে বের করে ত্বকের ঔজল্য ফিরিয়ে আনে। এছাড়া এটি চামড়ার ক্ষতিকারক পদার্থকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। চামড়ার অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে একটি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা দেয়। ব্রণ ও কালো দাগ দূর করার ক্ষেত্রেও এর জুড়ি মেলা ভার। ত্বককে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ থেকে বাঁচায় এবং বলিরেখা আসতে দেয়না।
মুখে দুর্গন্ধ হতে দেয়না:
পাইরিয়া বা দাঁতের গোড়ায় ব্যথা, মাড়ি ফুলে যাওয়া সহ ব্রাশ করার পরেও মুখে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়া এই সব কিছু নিরাময় করতে ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা জানা অত্যন্ত জরুরি। ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ঠাণ্ডা জলে লেবু দিয়ে খেলে ব্রাশ করার প্রয়জন হবেনা।
নখ সুন্দর রাখে:
ঠাণ্ডা জলে লেবুর রস দিয়ে খেলে পাতলা ভঙ্গুর নখের সমস্যা মেটে। পরিবর্তে সুন্দর সুস্থ ও মসৃণ নখ তৈরি হয়। এছাড়া লেবু পালিশ করলে নখের রং হীনতার সমস্যা কেটে যায় এবং এটা নিজের আসল রং ফিরে পায়।
ওজন কমায়:
শরীরের অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি থেকে মুক্তি পেতে ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও গুরুত্ব অপরিসীম। খালি পেটে সাধারণ তাপমাত্রার ঠাণ্ডা জলে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে তার এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
রক্তের Ph মাত্রা স্বাভাবিক রাখে:
ঠাণ্ডা জলে লেবুর রস আর নুন দিয়ে পান করলে রক্তের পিএইচের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। লেবু টক জাতীয় ফল হলেও আমাদের শরীরে ক্ষার-এর মতো কাজ করে। শরীরে অ্যাসিডিটি তৈরি রোধ করে। নিয়মিত লেবু জল পান করলে পিএইচ্ ঠিক থাকে।
গর্ভাবস্থায় শিশুর শারীরিক গঠনে সাহায্য করে:
ভ্রূণ অবস্থায় মায়ের গর্ভে শিশুর শারীরিক ও মানসিক গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় সঠিক মাত্রার পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি। সেই জন্য গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রতিদিন লেবুর সরবত বা লেবুর জল খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। এই সময় ভিটামিন সি বাচ্চাদের হাড়ের গঠনে বিশেষ ভাবে উপকারী হয়।
শ্বাসকষ্ট কমায়:
যাদের শ্বাস নিতে সমস্যা হয় তাঁরা প্রতিদিনের জীবনে নিয়ম করে ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন। যারা স্বল্প শ্বাসকষ্টের সমস্যায় সারাবছরই ভোগেন তাদের জন্য এক গ্লাস ঠাণ্ডা জলে লেবুর রস দিয়ে পান করলে হাতেনাতে উপকার পাবেন।
বয়সের দাগ কমায়:
বয়সের সাথে আমাদের চামড়া ঢিলে হতে শুরু করে। ফলে দেখা দেয় বলিরেখা। জলের সাথে লেবুর রস পান বা প্রভাব পড়েছে এমন জায়গায় লেবুর রস লাগালে পরিবর্তন অনুভব করতে পারবেন।
এক কথায় বলতে গেলে ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা আমাদের রোজকার জীবনে এতটাই প্রভাব ফেলে যে আমরা বহু কঠিন এবং মারণ রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারি অনায়াসেই। এর জন্য প্রতিদিন নিয়মকরে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে স্বাভাবিক উষ্ণতায় লেবুর জল খেলে শরীরের বিভিন্ন রোগ সহ অতিরিক্ত মেদ গলানোর জন্য খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই শরীরকে বিভিন্ন দিক থেকে সুস্থ রাখতে আজই লেবুর জলকে নিজের অভ্যাস বানিয়ে নিন।
Frequently Asked Questions
দিনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৩ থেকে ৪ লিটার জল পান করতে হয়। পরিমাণ মেনে জল পান করলে হজম শক্তি বাড়ে এবং ত্বক ও শরীরকে সমস্যামুক্ত করে। জলের কার্যক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিতে প্রতিদিন এক গ্লাস লেবু পানি খেলে শরীরের অনেক ক্ষতিকর জীবাণু শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং ক্যান্সারের জীবাণু বাসা বাঁধতে পারেনা।
লেবু একটি টক জাতীয় ফল হলেও এতে থাকে ল্যাকট্রিক এসিড। তাই যদি অতিরিক্ত লেবুর জল পান করা হয় তবে অম্বল সহ দাঁত ক্ষয়ের মতো সমস্যার দেখা দিতে পারে।
যদি প্রতিদিন লেবু খাওয়ার পরও আপনার শরীর কোনরকম খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখায় তবে আপনি প্রতিদিন একটি করে লেবু খেতে পারবেন। প্রতিদিন লেবু খাওয়াতে আমাদের হজম ভালো হয় এবং শরীরে ক্ষতিকারক রোগ জীবাণু বাসা বাঁধতে পারেনা।