ধূমপান এমন একটি অভ্যাস যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে গ্রাস করেছে। যদিও আমরা অনেকেই জানি যে ধূমপান স্বাস্থ্যকর নয়, তবুও এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি অনেকের কাছে অস্পষ্ট থাকতে পারে। এই গাইডে আমি আপনাকে বলবো কেন ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এটি শরীরের নানা অঙ্গ ও সিস্টেমের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে।
ধূমপান সাধারণত সিগারেট, বিড়ি, এবং অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের মাধ্যমে হয়। কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব কি শুধুমাত্র শারীরিক দিকেই সীমাবদ্ধ? নাকি এর মানসিক এবং সামাজিক প্রভাবও হতে পারে?
এই পোস্টে, আমরা জানাবো ধূমপান থেকে কী কী রোগ হয়, ধূমপান কীভাবে আপনার শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এবং ধূমপান ছাড়ার জন্য কার্যকর উপায়গুলো। তাই যদি আপনি একজন ধূমপায়ী হন অথবা যদি আপনি ধূমপান বন্ধ করতে চান, তাহলে এই গাইডটি আপনাকে অনেক উপকারে আসবে।
মুখ্য বিষয়বস্তু:
- ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন?
- ধূমপান থেকে কোন রোগ হয়?
- ধূমপান ছাড়ার উপায়?
- তামাকের ক্ষতিকর দিক
চলুন, শুরু করি এবং জানি কেন ধূমপান আপনার জীবনে বিপজ্জনক হতে পারে।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন?
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক ক্ষতিকর অভ্যাস, যা ধীরে ধীরে শরীরের প্রতিটি কোষের ওপর প্রভাব ফেলে। সিগারেট, বিড়ি বা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যে রয়েছে নিকোটিন নামক একটি ক্ষতিকর উপাদান, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ধূমপান থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া শ্বাসতন্ত্র, হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোর ক্ষতি করে।
১. শ্বাসতন্ত্রের উপর প্রভাব:
ধূমপান শ্বাসতন্ত্রের উপর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যখন আপনি সিগারেট বা বিড়ি খান, তখন তার ধোঁয়া ফুসফুসে প্রবাহিত হয় এবং এটি ফুসফুসের কোষে জমে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের শ্বাসযন্ত্রের রোগ যেমন ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, এমফিসেমা, এবং সবচেয়ে ভয়ানক ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে।
ধূমপান দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, এবং একাধিক ফুসফুসের সংক্রমণের কারণ হতে পারে। যাদের দীর্ঘদিন ধরে ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে, তাদের জন্য শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
২. হৃদরোগের সৃষ্টি:
ধূমপান হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। সিগারেটের ধোঁয়া রক্তের প্রবাহে নানা ধরনের অস্বাস্থ্যকর পরিবর্তন ঘটায়। এর ফলে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘকাল ধরে ধূমপান করলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, এবং হৃদরোগ হতে পারে।
তামাকের ধোঁয়া শরীরের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
৩. ক্যান্সারের সম্ভাবনা:
ধূমপান সিগারেট, বিড়ি এবং অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যে প্রায় ৭০টিরও বেশি ক্যান্সার-কারক রাসায়নিক উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলি শরীরে প্রবাহিত হলে কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, যার ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়।
সিগারেটের ধোঁয়া ফুসফুস ক্যান্সার, মুখগহ্বর ক্যান্সার, গলা ক্যান্সার এবং প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার-এর ঝুঁকি বাড়ায়। এ ধরনের ক্যান্সারগুলি মারাত্মক এবং প্রায়ই নিরাময়যোগ্য নয়।
৪. যৌনস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব:
ধূমপান শরীরের নানান গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি যৌনস্বাস্থ্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি পুরুষদের মধ্যে ইরেকটাইল ডিসফাংশন এবং মহিলাদের মধ্যে ফার্টিলিটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সিগারেটের ধোঁয়া রক্তচলাচল ব্যাহত করে, যা যৌন অঙ্গের কর্মক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।
ধূমপান থেকে কোন রোগ হয়?
ধূমপান থেকে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে, যেগুলি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবং সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। চলুন, আমরা বিস্তারিতভাবে জানি কোন কোন রোগ ধূমপানের কারণে হতে পারে:
১. ফুসফুসের রোগ
ধূমপান ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি শ্বাসযন্ত্রের রোগ যেমন ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, এমফিসেমা, এবং ফুসফুস ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। যখন আপনি সিগারেট বা বিড়ি খান, তখন সেগুলি ফুসফুসে প্রবাহিত হয় এবং দীর্ঘদিন ধরে শরীরে জমে থাকে, যা ফুসফুসের কোষগুলিকে ধ্বংস করে।
- ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস: এটি একটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে কফ বা শ্লেষ্মা জমে এবং শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে যায়। এটি সাধারণত ধূমপানকারীদের মধ্যে দেখা যায়।
- এমফিসেমা: এটি একটি মারাত্মক শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যেখানে ফুসফুসের আলভিওলি (air sacs) ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, ফলে অক্সিজেন শোষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
- ফুসফুস ক্যান্সার: ধূমপান সবচেয়ে বড় কারণ ফুসফুস ক্যান্সারের। সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়া ফুসফুসের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
২. হৃদরোগ
ধূমপান হৃদরোগের জন্য অন্যতম প্রধান ঝুঁকি। এটি হৃদযন্ত্রের ব্লকেজ, হার্ট অ্যাটাক, এবং স্ট্রোক সৃষ্টি করতে পারে। তামাকের ধোঁয়া রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তনালীর দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। তাছাড়া, এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়, যা ব্লাড ক্লট সৃষ্টি করে এবং রক্ত সঞ্চালনের বাধা সৃষ্টি করে।
৩. ক্যান্সার
ধূমপান সিগারেট এবং বিড়িতে প্রায় ৭০টিরও বেশি ক্যান্সার-কারক রাসায়নিক উপাদান থাকে। সেগুলি শরীরের কোষে প্রবাহিত হলে, কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। এই ধরনের ক্যান্সারগুলির মধ্যে মুখগহ্বর ক্যান্সার, গলা ক্যান্সার, গল bladder ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার এবং ফুসফুস ক্যান্সার অন্যতম।
- মুখগহ্বর ক্যান্সার: ধূমপান করার ফলে মুখগহ্বরের কোষগুলিতে পরিবর্তন আসে, যা ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।
- গলা ক্যান্সার: ক্যান্সার রাগের আক্রমণ করতে পারে গলার অংশগুলোতে, বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে তামাকের ধোঁয়া প্রবাহিত হয়।
৪. ডায়াবেটিস
ধূমপান টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত ধূমপান করেন, তাদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স (insulin resistance) বেশি হয়, যা ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। ধূমপান রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, এবং এটি কোষে ইনসুলিনের প্রভাব হ্রাস করে।
৫. মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা
ধূমপান শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। এটি অ্যাক্সিয়টি, ডিপ্রেশন এবং অন্যান্য মানসিক অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। ধূমপান শরীরে স্ট্রেস হরমোন কোর্সোলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে এবং উদ্বেগ বা বিষণ্নতা হতে পারে।
কোন সিগারেট খেলে ক্ষতি হয় না?
এটি একটি খুবই সাধারণ প্রশ্ন। অনেকেই মনে করেন যে কিছু সিগারেট কম ক্ষতিকর হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো সিগারেট নেই যা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিকর নয়। সিগারেটের সব ধরনের ধোঁয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর, কারণ এতে থাকে নিকোটিন, ট্যার এবং কারসিনোজেনিক রাসায়নিক উপাদান যা ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করে।
বর্তমানে অনেক ব্র্যান্ড “লাইট” বা “মাইল্ড” সিগারেট বিক্রি করে, কিন্তু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে এগুলিও ঠিক তেমনি ক্ষতিকর। তাই, কোনো ধরনের সিগারেট খাওয়াই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে এবং 100% নিরাপদ কোনো সিগারেট নেই।
তামাকের ক্ষতিকর দিক
তামাক খাওয়া বা ধূমপান, মূলত, তামাকের পাতা থেকে তৈরি হওয়া পণ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। এই তামাকের মধ্যে থাকে একাধিক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান যা মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও সিস্টেমে অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু ক্ষতিকর দিক বিস্তারিত আলোচনা করা যাক:
১. ফুসফুসে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা
তামাকের মধ্যে থাকা নিকোটিন ও ট্যার আমাদের ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘকাল ধরে তামাক খাওয়া বা ধূমপান করা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, এমফিসেমা, এবং ফুসফুস ক্যান্সার এর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তামাকের ধোঁয়া শ্বাসযন্ত্রের কোষগুলোকে ধ্বংস করে এবং শ্বাসতন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস করে।
২. হৃদরোগ এবং রক্তনালী ব্লকেজ
তামাকের ব্যবহারে হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা সৃষ্টি হয়, যা হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এটি স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং রক্তনালীর ব্লকেজ হতে পারে। তামাকের ধোঁয়া রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা পরবর্তীতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৩. ক্যান্সারের ঝুঁকি
তামাকের মধ্যে থাকা শত শত রাসায়নিক উপাদান ক্যান্সারের জন্য দায়ী। মুখগহ্বর ক্যান্সার, গলা ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার এবং মূত্রথলি ক্যান্সার এসব তামাক ব্যবহারের ফলে শরীরে হতে পারে। প্রায় সব ধরনের ক্যান্সারেই তামাকের ভূমিকা রয়েছে, যা আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে ক্ষতি করে।
৪. গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর প্রভাব
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য তামাক খাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটি গর্ভপাত, অকাল প্রসব, নিউবর্ন ক্যান্সার এবং গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ক্ষতি করতে পারে। তামাকের ধোঁয়া গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দেয় এবং শিশুর জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের তামাক ত্যাগের প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
৫. মানসিক স্বাস্থ্য
তামাক খাওয়া শুধুমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে তামাক খান, তারা উদ্বেগ, মানসিক চাপ এবং ডিপ্রেশন এর মত মানসিক সমস্যার শিকার হন। তামাকের ধোঁয়া মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে এবং নেগেটিভ অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে।
৬. স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি
তামাক খাওয়া স্নায়ুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। নিকোটিন স্নায়ুতন্ত্রে প্রবাহিত হয়ে অতিরিক্ত উত্তেজনা সৃষ্টি করে, যা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি তামাক সেবন অ্যালঝাইমারস ডিজিজ, পার্কিনসনস ডিজিজ এবং অন্যান্য স্নায়ুজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ধূমপান ছাড়ার উপায়
ধূমপান একটি অভ্যাস যা বেশিরভাগ মানুষের জন্য সহজে ছাড়তে পারা যায় না। তবে, এটি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা সম্ভব। নিচে কিছু কার্যকর উপায় আলোচনা করা হল যা আপনাকে ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করতে পারে:
১. সঠিক মনোভাব এবং প্রতিজ্ঞা
ধূমপান ছাড়তে প্রথমে মানসিক প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার মনে থাকতে হবে যে, আপনি নিজের জীবনের জন্য এটি করছেন। স্বাস্থ্য এবং আর্থিক সাশ্রয়—এই দুটি কারণকে সামনে রেখে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিন।
২. ধূমপানের বিকল্প খুঁজুন
যতক্ষণ না আপনি ধূমপান ছেড়েছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি একটি বিকল্প খুঁজে বের করতে পারেন। চিজ, আখরোট, বা কম মিষ্টি খাবার খেতে পারেন যা আপনাকে সিগারেট খাওয়ার মনোবল কমাবে।
৩. নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (NRT)
নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (NRT) সিগারেটের নিকোটিনের বিকল্প হিসেবে কাজ করে, যা ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করে। এতে নিকোটিন প্যাচ, গাম, ইনহেলার বা লোজেঞ্জেস অন্তর্ভুক্ত। এগুলি ধীরে ধীরে ধূমপান ত্যাগ করার জন্য কার্যকরী হতে পারে।
৪. পেশাদার সাহায্য গ্রহণ করুন
ধূমপান ছাড়ার জন্য একজন পেশাদার কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে পারেন। তারা আপনাকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে প্রস্তুত হতে সহায়তা করতে পারে এবং ধূমপান পরিত্যাগের উপায় সম্পর্কে গাইড করবে।
৫. শারীরিক ব্যায়াম করুন
বডি মুভমেন্ট, যোগব্যায়াম বা সাঁতার কাটার মতো শারীরিক কার্যকলাপও ধূমপান পরিত্যাগে সাহায্য করতে পারে। শারীরিক ব্যায়াম অল্প সময়ের মধ্যে শক্তি এবং মনোযোগ তৈরি করে, যা ধূমপান থেকে আপনার মনোযোগ সরিয়ে ফেলবে।
৬. বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সহায়তা
ধূমপান পরিত্যাগ করতে আপনাকে পরিবার এবং বন্ধুদের সহায়তা প্রয়োজন। তাদের সহায়তা আপনার ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়া সহজ করে তুলবে এবং এগিয়ে যেতে প্রেরণা যোগাবে।
টয়লেটে বসে সিগারেট খেলে কি হয়?
ধূমপানের প্রতি অনেকেরই একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যে, টয়লেটে বসে সিগারেট খেলে ক্ষতি কম হয়। কিন্তু এই ধারণাটি একেবারেই ভুল। আসলে, সিগারেটের ধোঁয়া যেকোনো পরিবেশে ক্ষতিকর এবং টয়লেটে বসে সিগারেট খাওয়া আরো বেশি বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ এখানে কিছু কারণ রয়েছে যা আপনার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
১. বদ্ধ পরিবেশে ধোঁয়া প্রবাহিত হওয়া
টয়লেটে একমাত্র একটি ছোট পরিসর থাকে, যেখানে বদ্ধ পরিবেশে ধোঁয়া আরও বেশি ঘনীভূত হয়। এটা শুধু আপনার শরীরের ক্ষতি করে না, বরং আশেপাশের অন্যান্য ব্যক্তিরও ক্ষতি করতে পারে, যারা ওই সময়ে টয়লেটে প্রবেশ করছেন। ধোঁয়া নাক ও শ্বাসনালীর মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রবাহিত হতে থাকে এবং শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে।
২. ধোঁয়ার উপস্থিতি শরীরের মেধাশক্তি কমায়
টয়লেটের মধ্যে অনেক সময় অতিরিক্ত গরম এবং অল্প আলো থাকার কারণে শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব পড়ে। সিগারেটের ধোঁয়া মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ কমিয়ে দেয় এবং এই ধরনের পরিবেশে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা আরো হ্রাস পায়, যা আপনার দৈনন্দিন কার্যকলাপের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব
বদ্ধ পরিবেশে দীর্ঘ সময় সিগারেট খাওয়ার ফলে স্নায়ুতন্ত্রের উপর গভীর প্রভাব পড়তে পারে। সিগারেটের মধ্যে থাকা নিকোটিন স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে পার্কিনসনস ডিজিজ, অ্যালঝাইমারস ডিজিজ এবং অন্যান্য স্নায়ুতন্ত্রের রোগের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
৪. বিপদজনক পরিস্থিতি
টয়লেটে সিগারেট খাওয়ার ফলে সিগারেটের ছাই বা লাইটারের আগুন প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন টয়লেটের আশেপাশে কোনো ধরনের অগ্নিসংযোগের ঝুঁকি থাকে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির ফলে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, যা শুধু আপনার নয়, আপনার পরিবারের সবার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
৫. পানি ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ক্ষতি
টয়লেটের ভ্যাপর এবং পানির বাষ্পের কারণে সিগারেটের ধোঁয়া শরীরের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসে আরো বেশি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে থাকা টক্সিক উপাদানগুলো শ্বাসনালির কোষের মাধ্যমে শরীরে প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং এমফিসেমা।
৬. অনিরাপদ স্থান
টয়লেটে সিগারেট খাওয়া একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক অভ্যাস। সিগারেটের ধরন এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ের সাথে সুরক্ষিত থাকতে পারে, তবে টয়লেটে ধূমপানকে কখনই নিরাপদ বলে মনে করা উচিত নয়। এটি শুধু আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়, আপনার আশেপাশের মানুষেরও ক্ষতি করতে পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ধূমপান কি একেবারেই বন্ধ করে দেবো? — হ্যা একেবারেই বন্ধ করে দেবেন। তবে যদি দীর্ঘ দিনের অভ্যেস হয় তাহলে হঠাৎ করে একদম বন্ধ করে দেওয়াটা অনেক কঠিন হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে ধূমপানের পরিমান কমিয়ে আনুন।
আপনি প্রতিদিন যে পরিমান ধূমপান করেন, চেষ্টা করুন সেই পরিমান ধূমপান ২ দিনে করতে। তারপর নিজে ঠিক করুন কোন কোন সময়ে আপনার ধূমপানের চাহিদা বেশি থাকে, আর কোন সময়ে কম। যে সময়-এ চাহিদা কম থাকে সেই সময় গুলোতে আগে বন্ধ করুন। তারপর ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ বন্ধ করে ফেলতে হবে।