~বিজ্ঞাপন~
Home স্বাস্থ্য ও জীবনযাপন ভাবছেন জন্ডিস হয়েছে কিনা? জেনে রাখুন জন্ডিসের লক্ষণ ও তার প্রতিকার !

ভাবছেন জন্ডিস হয়েছে কিনা? জেনে রাখুন জন্ডিসের লক্ষণ ও তার প্রতিকার !

0
10
jaundice-symptoms-and-remedies
~বিজ্ঞাপন~

আজ কালের রোজকার অনিয়মিত জীবনের ধারাবাহিকতায় একাধিক রোগ আমাদের শরীরে বাসা বেঁধে আসছে। মূলত; সময় মতো খাবার না খাওয়া, শরীরের চাহিদা মতো জল না পান করা, অতিরিক্ত মশলাদার খবর খাওয়া, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখা যেতে থাকে। জন্ডিস আসলে এরকমই কোনো কারণে সৃষ্ট রোগের লক্ষণ মাত্র। ফরাসি শব্দ Jaunisse (জাউনিসে ) থেকে এই জন্ডিস শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। এই ফরাসি শব্দের অর্থ হলুদাভ। এই রোগে শরীরের রং ক্রমশ হলুদাভ হতে থাকে বলেই এই নাম করণ করা হয়েছে বলেই জানা যায়। জন্ডিস কে চিহ্নিত করতে ও এর থেকে প্রতিকার পেতে জন্ডিসের লক্ষণ ও তার প্রতিকার গুলি জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

জন্ডিস কি ?

ডাক্তারি ভাষায় বলতে গেলে জন্ডিস আমাদের শরীরের ভিতরের কোনো রোগের লক্ষণ। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে এই রোগ হয়। দেহের বিভিন্ন অংশ যেমন চোখ, হাতের ও পায়ের তালু হলুদ হয়ে যাওয়া, ত্বকের রং হলদেটে হয়ে যাওয়াকেই আমরা চলতি ভাষায় জন্ডিস বলে থাকি।

জন্ডিস এর লক্ষণ কি ?

জন্ডিস রোগের অনেক উপসর্গ রয়েছে। যার মধ্যে কিছু উপসর্গ তীব্র ভাবে দেখা দিলেও কিছু উপসর্গ এতই হালকা হয় যে দেখে বোঝা মুশকিল। নিম্নে কিছু লক্ষণ সম্পর্কে বলা হলো:

  • চামড়ায় ঘনঘন চুলকানি অনুভূত হওয়া
  • গায়ের চামড়া ও চোখ হলুদ বর্ণ ধারণ করা
  • সারাক্ষণ গা গোলানো বা বমি বমি ভাব
  • ত্যাগ করা মলের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
  • ঘন ঘন জ্বর আসা
  • শরীরের উষ্ণতা কম হয়ে যাওয়া
  • গাঢ় হলুদ বর্ণের প্রস্রাব
  • খাবারে অনিহা
  • দ্রুত ওজন হ্রাস হতে থাকা
  • পেটে ব্যাথা অনুভূত হওয়া।
  • হাড় এবং পেশীতে ব্যথা অনুভূত হওয়া।

জন্ডিসের কারণ :

~বিজ্ঞাপন~

আমাদের শরীরে সারাক্ষণ কোনো না কোনো বিক্রিয়া ঘটে চলেছে। এরই মধ্যে অন্যতম একটি বিক্রিয়া হলো রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার ভাঙন। এই লোহিত রক্ত কণিকার ভাঙার সময় আমাদের দেহে বিলিরুবিন নামক একটি হলুদ রঞ্জক পদার্থ উৎপন্ন হয়। যা রক্তের মধ্যে জমা হয়। আমাদের শরীরে লিভার এই বিলিরুবিন ভাঙার কাজ করে থাকে। যখন আমাদের দেহে লিভার ঠিক মতো কাজ করতে পারেনা তখন আমাদের শরীরে এই রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকে। যার ফল স্বরূপ জন্ডিস রোগের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। লিভার আসলে এই রঞ্জক পদার্থ ভেঙে মলের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বের করে দেয়।

জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয় ?

জন্ডিস নিছক লিভার জনিত রোগ হলেও এর ক্ষেত্রে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় রোগীদের।

সেগুলো হলো:

  • চোখ হলুদ হয়ে আসা ও মাঝে মাঝেই জ্বালা অনুভূত হওয়া
  • হলুদ প্রস্রাবের সাথে মূত্র নলিতেও ইনফেকশন হতে পারে
  • ঘন ঘন জ্বর আসা এবং ফলত শক্তিহীন হয়ে পড়া
  • খিদে না পাওয়া ফলে দ্রুত ওজন হ্রাস
  • হজমের সমস্যা
  • পেশীতে ব্যথা অনুভূত হওয়া

জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসা :

যেকোনো রোগের লক্ষণ চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা না করা উচিত। তবে জন্ডিস নিয়ন্ত্রণে কিছু ঘরোয়া টোটকাও রয়েছে। যা জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসা বললেও ভুল হবেনা।

সেগুলো হলো:

  • শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা। শরীর থেকে দূষিত টক্সিন বের করে দিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করা অবশ্যই দরকার।  এতে আমাদের শরীর পরিশোধিত থাকবে।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এর অন্যতম একটি ঘরোয়া প্রতিকার। নিয়মিত ফল, শাক সবজি ও উচ্চ প্রোটিন সম্পন্ন খাদ্য খেলে লিভারের কার্যগুণ বাড়ে যা বিলিরুবিন ভাঙতে সাহায্য করে।
  • ভেষজ চা আমাদের লিভারের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করার জন্য খুব উপকারী।
  • এক সাথে এক বারে অনেক খাবার গ্রহণের পরিবর্তে লিভারের হজম ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে দিনের বিভিন্ন সময়ে অল্প অল্প করে বারবার খাদ্য গ্রহণের পথে হাঁটতে হবে।
  • মদ্যপান এবং ধূমপান পুরোপুরি ভাবে ত্যাগ করতে হবে।
  • শরীরকে প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম প্রদান করতে হবে।
  • বেশি করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
  • কাঁচা হলুদে থাকে কারকিউমিন নামক একটি যৌগ যা লিভারের স্বাস্থ্য উন্নতিতে সাহায্য করে।

বিলিরুবিন টেস্ট

বিলিরুবিন টেস্ট জন্ডিস সনাক্ত করার একটি সহজ প্রক্রিয়া। শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকলে জন্ডিস বা তার থেকে আরও কোনো বড় রোগ ধরা পড়তে পারে। জন্ডিসের কারণ হিসেবে এক এবং অন্যতম হলো রক্তের বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি। তাই শরীরে কোনো রকম জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে সবার আগে বিলিরুবিন টেস্ট করা প্রয়োজন। এর জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। এরপর সেই রক্তের স্যাম্পেল নিয়ে পরীক্ষা করলেই রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত তা জানা যায়।

রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত ?

রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত তার বিষয়ে ডাক্তাররা বিশদে বলে রেখেছেন। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা 25 µmol/L বা 1.2 mg/dL থাকলে তা আমাদের শরীরের জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু এই মাত্রা বেড়ে 50 µmol/L বা 3 mg/dL হলে এই মাত্রা অস্বাভাবিক হয়। যার ফলে জন্ডিস রোগের লক্ষণ দেখা যায়।

বিলিরুবিন বেড়ে গেলে করণীয়

আমাদের রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ আছে তার মধ্যে লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস অন্যতম। এছাড়াও অতিরিক্ত সুরা পান, মশলাদার খাবার বেশি গ্রহণ করা এরকম আরও কারণ থাকে। তবে বিলিরুবিন নামক এই রঞ্জক পদার্থ সূর্যের তাপে ভেঙে যায়। তার জন্য সকালের সূর্যতাপ খুব উপকারী। এছাড়া হালকা খাবার গ্রহণ, মদ্যপ বস্তু থেকে দূরে থাকা, সময় মতো খাবার খাওয়া, পরিমাণ মতো জল পান করা ছাড়াও মৌসুমী লেবুর রস, ঘোল, আখের রস, তরমুজ, খরবুজ, মুলো পাতা টমেটোর রস ইত্যাদি খেলে আমাদের লিভার সতেজ হয় এবং ধীরে ধীরে তার কার্য ক্ষমতা ফিরে পায়। ফলে বিলিরুবিন দ্রুত ভেঙে জন্ডিস রোগটি সেরে উঠতে পারে।

শেষে বলা যায় জন্ডিস একটি সাধারণ লিভার জনিত ছোট সমস্যা হতে পারে যেখানে স্বল্পবস্থায় ধরা পড়লে কোনো ওষুধ ছাড়াই বাড়িতে ডাক্তারের পরামর্শ শুনেই সরিয়ে তোলা যায়। যেখানে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়না। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগ আরও বড় কোনো রোগের লক্ষন হতে পারে। তাই লক্ষণ চোখে পড়া মাত্রই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Frequently Asked Questions

জন্ডিস কত দিনে ভালো হয় ?

জন্ডিস কত দিনে ভালো হয় তা নির্ভর করে রোগের বিশালতার উপরে। তবে যদি স্বল্প পরিমাণ জন্ডিসের লক্ষণ থাকে তবে সেক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহ যাওয়ার পর থেকেই স্বাস্থ্যের উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। অন্যথায় অন্তত ১৫ দিন পর থেকেই স্বাস্থ্যের উন্নতি শুরু হয়।

লিভার জন্ডিস হলে কি হয় ?

সাধারণ ভাবে জন্ডিস হলো আমাদের দেহের লাল রক্ত কণিকা ভেঙে উৎপন্ন হওয়া বিলিরুবিন রঞ্জক পদার্থের অতিরিক্ত শোষণ। এই পদার্থ ভাঙার কাজে আমাদের লিভার কাজ করে থাকে। যখন আমাদের লিভারের কার্যক্ষমতা কমে আসে তখনই চোখ বা ত্বকের হলুদাভ রং বেরিয়ে আসে যা থেকে বোঝা যায় জন্ডিস রোগের লক্ষণ। এর ফলে আমাদের লিভার দুর্বল হয়ে পড়ে, হজম ক্ষমতা হ্রাস পায়, মল ও মূত্র স্বাভাবিক রং হারায়। জ্বর আসা, পেশী ব্যথা সহ্য ক্ষুদাহীনতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

~বিজ্ঞাপন~
Previous articleহস্ত মৈথুনের কত দিন পর করা উচিত – হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর দিক
Next articleগর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায় | প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
শিবম সাহা
🎯 লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:  আমার লক্ষ্য একটাই—সহজ ভাষায়, নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়ে পাঠকদের সাহায্য করা, যাতে তারা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যকর ও আনন্দদায়ক কিছু পরিবর্তন আনতে পারে। “Fresh Living” হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনি পাবেন স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, প্রযুক্তি ও সচেতন জীবনধারার উপর সত্যিকার অভিজ্ঞতা ও গবেষণালব্ধ জ্ঞান।🧪 অভিজ্ঞতা: আমি একজন প্রযুক্তিগত পেশাদার, এবং পাশাপাশি একজন ব্লগার। আমি বিশ্বাস করি, স্বাস্থ্যসচেতনতা, সৌন্দর্যচর্চা এবং আধুনিক জীবনের প্রয়োজনে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মধ্যেই রয়েছে টেকসই ও সুন্দর জীবনের চাবিকাঠি। Fresh Living-এর মাধ্যমে আমি চেষ্টা করি এই তিনটি দিককে একত্রিত করে পাঠকদের জন্য বাস্তবসম্মত, ব্যবহারযোগ্য এবং জীবনঘনিষ্ঠ তথ্য তুলে ধরতে। আমার লক্ষ্য, জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করে পাঠকদের দৈনন্দিন জীবনে কার্যকর সমাধান দেওয়া—যাতে স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য আর প্রযুক্তি মিলেমিশে জীবনটা হয় আরও সুন্দর, সহজ ও সচেতন।💬 যোগাযোগের জন্য: আপনার কোনো প্রশ্ন, মতামত বা কোনো বিষয় জানতে আগ্রহ থাকলে Contact Page এ গিয়ে মেসেজ পাঠাতে পারেন। আমি সর্বোচ্চ দ্রুততার সাথে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।পাশে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ! আপনাদের ভালোবাসা, মতামত ও অনুপ্রেরণাই এই ব্লগকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here